ব্যয় বাড়তে পারে পাঁচ খাতের ব্যবসায়

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু খাতের ব্যবসায় করারোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে কর ছাড়ও দেয়া হয়েছে বেশকিছু খাতে। যেসব খাতের ওপর করারোপ করা হয়েছে কিংবা করের আওতা বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাবে। দেশের পুঁজিবাজারেও বিভিন্ন খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে। করছাড়ের কারণে এর মধ্যে বেশকিছু খাতের কোম্পানিগুলো একদিকে যেমন সুবিধা পাবে অন্যদিকে করভার বাড়ার ফলে বস্ত্র, কাগজ, নির্মাণ, ইস্পাত ও তামাক খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজারভিত্তিক বেশকিছু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ব্র্যাক-ইপিএল সিকিউরিটিজ, ইবিএল সিকিউরিটিজ ও ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ওপর আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রভাব বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ ও রসায়ন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, ইলেকট্রনিকস, খাদ্য, আবাসন, সিমেন্ট ও অটোমোবাইল খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে বাজেটের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। টেলিযোগাযোগ, পারসোনাল কেয়ার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে বাজেটের প্রভাব হবে মিশ্র। অন্যদিকে করভার বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসার ব্যয় বাড়বে বস্ত্র, কাগজ, নির্মাণ, ইস্পাত ও তামাক খাতের কোম্পানিগুলোর।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে উৎপাদন পর্যায়ে কটন ইয়ার্ন ও ম্যান মেড ফাইবারের ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে করের পরিমাণ ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবারের ওপর ১ শতাংশ হারে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে বস্ত্র খাতে উৎপাদন খরচ বাড়বে। বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্কয়ার টেক্সটাইলস, মতিন স্পিনিং, এপেক্স স্পিনিং, সায়হাম কটন, সায়হাম টেক্সটাইল, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বাড়তে পারে।
বাজেট প্রস্তাবে উৎপাদন পর্যায়ে সেল্ফ-কপি পেপার ও ডুপ্লেক্স বোর্ড/কোটেড পেপারের ওপর মূল্য সংযোজন করের (মূসক) হার সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে এ খাতের কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বসুন্ধরা পেপার মিলসের ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে।
নির্মাণ খাতের কোম্পানিগুলোর ওপর মূসকের পরিমাণ সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে এ খাতের প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাবে এবং ঠিকাদারদের মুনাফার পরিমাণ কমবে। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মির আকতার হোসেনের ব্যবসায় প্রভাব পড়তে পারে।
ইস্পাত খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে বিভিন্ন ধাপে এমএস পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত করারোপ করা হয়েছে। এর ফলে স্ক্র্যাপ আয়রন ও ফেরো অ্যালয়সের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, ডমিনেজ স্টিল, আরএসআরএম স্টিল, এস আলম কোল্ড রোলড স্টিল ও এসএস স্টিলের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক খাতের কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সিগারেট উৎপাদকদের নিট বিক্রয় মূল্যের ওপর অগ্রিম করহার ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক আমদানিকারক কর্তৃক আমদানীকৃত সিগারেট পেপারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে তামাক খাতের কোম্পানিগুলোর নগদ অর্থ বেশি খরচ হবে এবং এতে কোম্পানিগুলোর তারল্য পরিস্থিতি সংকুচিত হবে। এতে কোম্পানিগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিতে হতে পারে, যা আর্থিক ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। তবে সিগারেট পেপার আমদানির ক্ষেত্রে কর বাড়ানোর ফলে অবৈধ সিগারেট উৎপাদকদের জন্য অসুবিধা হবে, যা বৈধ সিগারেট উৎপাদকদের ব্যবসা বাড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।