বিগত সরকারের সময় দেশে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ হয়েছে
বিগত সরকারের সময় দেশে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ হয়েছে। এজন্য শিল্প খাতকে বাঁচাতে কৃষিতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকায় সার কিনে ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা স্বজনতোষী পুঁজিবাদ জেঁকে বসেছিল। যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো বৈচিত্র্য আসেনি।
চট্টগ্রামের একটি হোটেলে গতকাল ‘বাংলাদেশের বিকশিত অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অভিগমন’ শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এ কথা বলেন। ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) চট্টগ্রাম শাখা এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘গত সরকারের রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, বিভিন্ন বাহিনী একটি দুর্নীতির জোট তৈরি করেছিল। শুধু রাষ্ট্রপতি যে পরিমাণ হত্যা মামলার আসামি ক্ষমা করেছেন তা ইতিহাসে নেই। শ্বেতপত্র অনুযায়ী, ২৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এজন্য কোম্পানির সিএ (প্রধান হিসাবরক্ষক), সিএফও (চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার) দায়ী নয়? এখন সময় এসেছে এসব বিষয়ে সংস্কার করার। এতদিন অনুপযুক্তভাবে সব টপলাইনভিত্তিক বিনিয়োগ হয়েছে। বৈচিত্র্যকরণ অনুসরণ করে বিনিয়োগ হয়নি।’
দেশের শিল্প খাত উচ্চ শুল্ককরের দ্বারা পরিচালিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতের লোকজন ট্যাক্স (কর) পরিশোধ করেন না, কিন্তু ভ্যাট দেন। আমাদের মতো দরিদ্র অর্থনীতির দেশে ভ্যাট ও ট্যাক্সের মধ্যে একটা সংযোগ দরকার। অবৈধ আর্থিক বহিঃপ্রবাহ, অলিগার্কের উত্থান, মুষ্টিমেয় লোকের হাতে সম্পদের কেন্দ্রীকরণ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা এবং ব্যাপক দুর্নীতি দেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। এ কারণে ছাত্র-নাগরিক বিদ্রোহের মাধ্যমে গঠিত নতুন সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
জুলাই-আগস্টের শহীদদের মর্যাদা দিতে দেশের সব শিল্প খাত ধরে ধরে সংস্কার করা হবে জানিয়ে শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘এ আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। ৫০ হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছেন। তবু আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি। এ দেশটা আমাদের সন্তানদের জন্য গড়তে হবে। কিন্তু দেশের মধ্যে একটা সময় নানা কিছু ঘটল। ওই যে বয়ানটা ছিল, সেটা আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। আমরা অনেকেই নিশ্চুপ ছিলাম। কিন্তু কিছু বাচ্চা ছেলে প্রতিবাদ করল। পরে জনতাও যোগ দিলেন। পরিবর্তন এলো। এখন আমরা যদি আবার গতানুগতিকভাবে একই জিনিসের চর্চা করি, দক্ষতার মূল্যায়ন না করি তবে এটি গ্রহণযোগ্য হবে না।’
সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় আরো বক্তব্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, বিএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলীহোসেন আকবরআলী, আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট ও বিল্ডকন কনসালট্যান্সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।