South east bank ad

আট মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২০.১৫ শতাংশ

 প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   মন্ত্রনালয়

আট মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২০.১৫ শতাংশ

বিদেশি বিনিয়োগের অব্যাহত নিম্নগামিতার বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান হয়েছে অর্থনীতিতে। নানামূখি প্রচেষ্টাতেও বাড়ছে না বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। এসব কারণে লেনদেনের ভারসম্যহীনতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো সম্ভব হয়নি।

আগামী দিনে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ছাড়া বিনিয়োগের স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে না বলে মনে করছেন বহু বিনিয়োগকারী। এই পরিস্থিতি উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগ বাস্তবায়নে নজর দিতে বলছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে নেট ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে। আগের অর্থবছরের একই সময় ১০৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এসেছিল। সে হিসাবে আট মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২০.১৫ শতাংশ। বছরের হিসেবে ২০২৪ সালে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম নেট এফডিআই এসেছে বাংলাদেশে।

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকট, ডলার ঘাটতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। বিশেষ করে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হয়নি বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাাশি গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে স্পেশাল ইকোনমিক জোনে এসব সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যদি ব্যবসার মুনাফা নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যেতে না পারেন তাহলে তাঁরা নিরুৎসাহিত হবেন। সর্বোপরি আমাদের দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক সরকারের দিকে এগোতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালে দেশে নিট এফডিআই এসেছিল ১.৫৭ বিলিয়ন ডলার, এরপর থেকে প্রতিবছর আগের বছরের তুলনায় এফডিআই কমেছে। সব মিলিয়ে ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিএমপি৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিভাইজড ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালে এসেছে সবচেয়ে কম এফডিআই।

২০২৪ সালে আসা মোট এফডিআইয়ের মধ্যে ৬২২ মিলিয়ন ডলার ছিল রিইনভেস্টেড আর্নিংস অর্থাৎ পুরনো বিনিয়োগ থেকে আয় আবার বিনিয়োগ করা। এটি মোট এফডিআইয়ের প্রায় ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া ইক্যুইটি ক্যাপিটাল এসেছে ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার এবং ইন্ট্রা-কোম্পানি লোন বা আন্ত কোম্পানি ঋণ এসেছে ১০৪ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে ব্যাংকিং খাতে-৪১৬ মিলিয়ন ডলার। এরপর রয়েছে টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট খাত-৪০৭ মিলিয়ন ডলার। ওষুধ ও রাসায়নিক, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি এবং খাদ্য খাতেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ এসেছে।

চলতি এপ্রিলে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ আয়োজন করে। বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, এই সামিটে ৫০টি দেশের ৪১৫ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। এই আয়োজন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা কি ভালো আছি? আমরা তো ভালো নেই। তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কী দেখে আসবেন? তাঁরা তো আমাদের দিকে আগে দেখবে। সেই দেশের বিনিয়োগকারীরা কেমন আছে?’

রাজনৈতিক কারণে বিনিয়োগ কমছে জানিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বৈদেশিক বিনিয়োগ আসছে না বললেই চলে। যা আসছে তা যৎসামান্য। গত আট মাসে ২০৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ কম হয়েছে। আর গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বিনিয়োগ কমার যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যায়। এসব ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসব বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা পায়।’

BBS cable ad

মন্ত্রনালয় এর আরও খবর: