ফেসবুক পরিচয় থেকে রুমে দুই তরুণী, পর্নোগ্রাফির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
প্রথমে ফেসবুকে পরিচয় দুই তরুণীর। পরে দেখা করার নামে নিয়ে যায় বাসায়। সেখানে সহযোগীদের নিয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি তুলে পর্নোগ্রাফির ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আদায় করে চক্রটি।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর ভাটারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিনখানে অভিযান চালিয়ে ঐ পর্নোগ্রাফার ও চাঁদাবাজ চক্রের মাস্তুরা আক্তার প্রিয়াসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত বাকিরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. আল মাহমুদ মামুন এবং তার সহযোগী মো. আকরাম হোসেন আকিব, তানিয়া আক্তার, মো. রুবেল, মো. মহসীন ও মো. ইমরান।
দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি জানান, সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী রাজধানীর উত্তরা র্যাব-১ অফিসে অভিযোগ করে, গত ২২ জুলাই ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়ার সঙ্গে ভুক্তভোগীর যোগাযোগ হয়। ১০ আগস্ট দুপুরে তাদের দেখা হয়। পরে কৌশলে তাকে রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যায় প্রিয়া। রুমের ভেতরে প্রবেশ করার পর পরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগী মো. আল মাহমুদ মামুন, মো. আকরাম হোসেন আকিব, তানিয়া আক্তার, মো. রুবেল, মো. মহসীন ও মো. ইমরান জোরপূর্বক ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে।
ভিকটিমকে আটক রেখে ধারণকৃত অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাৎক্ষণিকভাবে ভিকটিমের বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা জোরপূর্বক আদায় করে। লোকলজ্জার ভয়ে ভিকটিম ঘটনাটি কোথাও অভিযোগ না করলেও ১ সপ্তাহ পরে অভিযুক্ত মামুন আরো ২ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে অশ্লীল ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
পরে ভিকটিম নিরুপায় হয়ে র্যাব-১ এর কাছে লিখিত অভিযোগ করে আইনি সহায়তা চান। পরে এর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ নজরদারি শুরু করে এবং তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে অশ্লীল ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণ কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল ও ২টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। চক্রের মূলহোতা মো. আল মাহমুদ মামুন এবং তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া। এই দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে মামুন বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানাত। ভিকটিমরা সেখানে গেলে অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করত।
আব্দুল্লাহ আল মোমেন জানান, এভাবে চক্রটি ২ বছরে প্রায় ৫০ এরও বেশি ভিকটিমের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। আসামিরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অর্থ ব্যায় করে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে আসছিল মর্মে স্বীকার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।