পাবনায় ইছামতী নদীর বাঁচার আর্তনাদ
রনি ইমরান (পাবনা):
পাবনার মানুষের প্রাণের স্পন্দনে মিশে আছে শহরের পেটের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ইছামতী নদী।আজ থেকে ৪০ বছর আগেও এই স্রোতস্বিনী ইছামতী ছিল স্বচ্ছ পানিতে টলমল। নদীর দুকূলে উপচে পড়তো শাম্ত ছোট ঢেউ। দুপাশে ছিল নির্মল প্রকৃতি মাঝে শান্ত এক নদী।এক সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বজরা নিয়ে এই নদী দিয়ে কুষ্টিয়া শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে যেতেন । ইছামতির সৌন্দর্য নিয়ে তিনি লিখেছেন অনেক কবিতা। কয়েক যুগের ব্যবধানে নদীটি আজ মৃতপ্রায়। পানি শূণ্য নদীর দুপাশে গড়ে উঠেছে কয়েকশত অবৈধ স্হাপন আর নদীতে জমেছে আর্বজনার স্তুপ। ক্রমাগত দখল আর দূষণে বর্তমানে নদীটি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটাই একসমায়কার সেই স্রোতাস্বিনী ইছামতি নদী। যে নদী দিয়ে একসময় পানসি, ডিঙ্গি,বজরা চলতো। গাঁয়ের মানুষ নদীতে গোসল করতো সাঁতার কাটতো।টলমলে জলে নৌকায় দূরদূরান্ত ঘুরে বেড়াতো।নদী পাশের গ্রাম গুলাতে অনেক নববধূ প্রথম শ্বশুরবাড়ি এসেছে এই নদী দিয়ে নৌকা যোগে।পাবনা শহরের প্রবেশ মুখে ছিল খেয়াঘাট । খেয়াঘাটে রমরমা ব্যবসা জমজমাট ছিল।সেখানে নৌকায় করে দূরদূরান্ত থেকে মালামাল আনা নেওয়া করা হতো।নদী পাড়ের বাসিন্দা শাহজাহান সিরাজ স্মৃতিচারণ করে বলেন,একসময় এই ইছামতী নদীতে আমার গোসল করেছি, সাঁতার কেটেছি। কি সুন্দর স্বচ্ছ ছিলো পানি!এক স্হান থেকে অন্য স্থানে নদী পথে নৌকায় করে মালামাল নিয়ে চলাচল করেছি। এখন এই নদী দেখে তা বোঝার উপায় নেই। জানা যায়, ১৯৭০ এর দশকে ইছামতির প্রস্থ ছিল ১০০ থেকে ৩০০ ফুট। দিনের পর দিন দখলে নদীর প্রস্থ কমে এখন দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ২৫ ফুটের কম। অধিকাংশ এলাকা ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে নদীর পথ।কোথাও কোথাও নদীর মধ্যেই স্হাপন নির্মাণ করে গলা টিপে ধরা হয়েছে নদীর পথের। শহরের প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রভাবশালীরা উৎসমুখ ভরাট করে ফেলায় এ নদী এখন পরিণত হয়েছে প্রাণহীন খালে।ইছামতীর দখল দূষণের কারণে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। বার বার নদী খননে উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও অদৃশ্য কারণে তা থেমে যায়। সামাজিক আন্দোলন, আইনী পদক্ষেপের মাধ্যমে কোন কিছুতেই প্রতিকার না পেয়ে হতাশ হয় পাবনাবাসী।মাহাবুব আলম বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী হলো প্রাণ। একসময়কার স্রোতস্বিনী এই ইছামতী খনন করে আগের রূপে ফিরিয়ে দেওয়া এখন সময়য়ের দাবী।
পাবনা শহরের ৮ কিলোমিটার জুড়ে নদীটি এখন একটি ড্রেন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । পানি নিষ্কাশনের জন্য শহরের ছোট বড় সকল ড্রেনগুলো নদীতে সংযোগ করা হয়েছে। শহরের বর্জ্য বাসা বাড়ি হোটেলের আর্বজনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। কলকারখানা রাসায়নিক বর্জ্য পানিতে মিশে মৎস্য নিধন হয়েছে।
পাবনাবাসী দীর্ঘদিন যাবত ইছামতী নদী খননের জন্য আন্দোলন করছে কিন্তু কয়েক যুগ পাড় হলেও এই নদী খননের কাজ শুরু না হওয়ার হতাশ শহরবাসী৷ ২০০৮ সালে নদী খননের কাজ শুরু হলেও অবৈধ বসতিদের বাধা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে অনেক চেষ্টার পরেও খননের কাজ শুরু হয়নি।তবে গত বছর নদী পাড়ের ৮ কিলোমিটার জায়গায় সকল অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলে অর্ধেক কাজ বাকি থাকতেই নদী উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
ইছামতী পাড়ের অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে উদ্যোগ নিলে শহরবাসী আনন্দে মেতে ওঠে। তাদের প্রাণের দাবী ইছামতী নদী আবার ফিরে পাবে প্রাণ।