হিটস্ট্রেস এর কারনে বাগেরহাটে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি
নইন আবু নাঈম (শরণখোলা,বাগেরহাট) :
বাগেরহাটের হিটস্ট্রেস এর কারনে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৯টি উপজেলায় ৪শ ৪২ দশমিক ৬ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। দূর থেকে ধানগাছগুলোকে স্বাভাবিক মনে হলেও ছড়ায় থাকা ধানগুলো চিটে হয়ে গেছে। বাতাসের তোরে কিছু কিছু ক্ষেতের ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ধারদেনা করা টাকায় উৎপাদিত ফসলের এমন ক্ষতিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বোরো মৌসুমে বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৫ হাজার ৫‘শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে এবং হিট স্ট্রেজের ফলে বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৪‘শ৪২ দশমিক ৬ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে চিতলমারী উপজেলার চাষীদের সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই উপজেলায় ২‘শ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সদর উপজেলা। এই উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া ফকিরহাটে ৮০, কচুয়ায় ৪০, মোরেলগঞ্জে ২০, মোল্লাহাটে ১০, রামপালে ২ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর বাইরে শরণখোলা ও মোংলায় সামান্য কিছু জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে। এর ফলে প্রায় সহ্রসাধিক কৃষক আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছে। তবে বাস্তবে ক্ষতির পরিমান আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।
চিতলমারী উপজেলার কৃষক রনজিত কুমার বলেন, খুব আশা করে ধান রোপন করেছিলাম। এক মাসের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু এখন ধানের যে ক্ষতি হয়ে গেল, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। ঝড়ের পরে ধানের কাছে এসে কানতে কানতে বাড়ি চলে যাই।
কৃষানী লোপা মন্ডল বলেন, নগদ-বান্দায় জমি রেখে ধান লাগিয়ে ছিলাম। কিন্তু কয়েক মিনিটের ঝড়ে ধানগুলো নষ্ট হয়ে গেল। ধানের কাছে আসলে চোখ থেকে শুধু জল বের হয়। কিভাবে চলব এখন। সংসারে ৬ জন লোক, প্রতিদিন কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। শুধু তো আমার নয়, এলাকার অনেকেরই এই অবস্থা। কি যে হবে ভগবানই জানে’।
কচুয়া উপজেলার ইমরান হোসেন বলেন, হঠাৎ ঝড়ে আমাদের শেষ করে দিয়ে গেছে। করোনায় সব কাজ বন্ধ, আয়ও বন্ধ একেবারে। ভরসা ছিল ধানের উপর, তাও শেষ হল ঝড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় কিছু কিছু ধান ক্ষেত হিটস্ট্রেস জনিত কারণে ধানের ফুলন্তরের শীষ সাদা হয়ে গেছে। জেলায় ৪‘শ৪২ দশমিক ৬ হেক্টর জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান বেশি আক্রান্ত হয়েছে। আমরা চাষিদেরকে পরিমিত সেচ ও যৌক্তিক পটাশ সারের স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি।