বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক, শ্রমিকরা কাজে ফিরেছে
বেনাপোল প্রতিনিধি:
একদিন বন্ধ থাকার পর বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। পণ্য লোড-আনলোড চলছে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ও মঙ্গলবার সকালে দফায় দফায় শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পর দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরটি সচল রাখতে তারা একমত হওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজে ফিরে আসে শ্রমিকরা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণে নিতে সাবেক বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর কাউন্সিলর রাশেদ আলীর নেতৃত্বে বহিরাগত একটি দল সোমবার সকালে বন্দর এলাকায় শতাধিক শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। বোমার শব্দ পেয়ে তারা কাজ বন্ধ করে লাঠিসোটা নিয়ে একজোট হয়ে রাস্তায় নেমে এলে বহিরাগতরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।
বোমা হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যচালান লোড-আনলোড বন্ধ রেখে শ্রমিকরা বেনাপোল বন্দরসহ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঘটনার বিচার দাবি করে। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা মেয়রের অফিস, মার্কেটে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। কাস্টমস অফিসের সামনে মেয়রের ৫তলা ভবনের নীচে অবস্থিত আইসিবি ব্যাংকের বুথসহ ভবনের সামনের গ্লাস ভাংচুর করা হয়। এতে ১১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বেনাপোল আইসিবি ইসলামি ব্যাংক এর ম্যানেজার আবুল কালাম জানান।
এদিকে হামলার ঘটনার মূল হোতা পৌর কাউন্সিলর রাশেদ আলীকে গ্রেফতারের জন্য তার দিঘীরপাড়স্থ বাড়িতে ৩ দফা অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পরে তার বাড়ি থেকে একটি প্রাইভেট কার থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
বেনাপোলের পৌর কাউন্সিলার রাশেদ আলীর পরিবার জানায়, বেনাপোল বন্দরে যে ঘটনা ঘটেছে তার সাথে রাশেদ কোনভাবে জড়িত না। তিনি মাছ চাষ করেন। অযথা এই ঘটনায় বাড়ি থেকে রাশেদ আলীর একটি প্রাইভেট কার থানা পুলিশ নিয়ে গেছে।
বেনাপোল পৌর যুবলীগ নেতা (মেয়র গ্রুপ) মুকুল মিয়া জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম ও দ্বীন ইসলামের দুটি মোটরসাইকেল ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে বিনা কারণে পৌর মেয়রের মার্কেটও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায় ওই বন্দরের বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা।
বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের কর্মকর্তা কামাল হোসেন ভুইয়া বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। বন্দরে কাজকর্ম স্বাভাবিক ভাবে চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বন্দর এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে।
অন্যদিকে সোমবার রাতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মজ্ঞুর নেৃতৃত্বে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ বেনাপোল বন্দরের শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। তারা বন্দরকে সচল করতে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য বিদেশ থেকে আসার পর বিষয়টি নিয়ে বসা হবে বলে আশ^স্থ করলে শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজে যোগ দিতে সম্মত হন।
বেনাপোল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন জানান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অহিদুজ্জামান ৩ বছর আগে বোমাবাজি করে অবৈধভাবে শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে আছে। এরপর তিনি সাধারণ শ্রমিকদের সদস্যপদ থেকে বাদ দিতে শুরু করে। সোমবার বঞ্চিত শ্রমিকদের গ্রুপ ও অহিদুজ্জামান গ্রুপদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। অথচ সন্ত্রাসীরা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন এসব সন্ত্রাসী শ্রমিকদের মদদ দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এমপি গ্রুপের রাজনীতি করেন শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল হক মঞ্জু জানান, মেয়র আশরাফুল আলম লিটন মিথ্যা মামলা করে অবৈধভাবে বেনাপোল পৌরসভার মেয়র হিসেবে রয়েছেন। তার ক্যাডার কাউন্সিলর রাশেদ আলীর নেতৃত্বে সোমবার সকালে মাইক্রোবাসে এসে শ্রমিকদের পোশাক পড়ে বন্দরের দখল নিতে বোমবাজি শুরু করে। পরে সাধারণ শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে বের করে দেয়। মেয়র লিটন শান্ত বন্দরটিকে অশান্ত করে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।