কেন্দুয়ায় আমন ধানের বাম্পার ফলন, দামে খুশি কৃষক
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের সোনালি আমন ধান দোল খাচ্ছে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে। স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের আগাম আমন ধান পাকতে শুরু করায় এরমধ্যে ধান কাটাও শুরু হয়েছে। আমন ধানের বাম্পার ফলন ও দামে খুশি কৃষকেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজের মাঝে টুকরো টুকরো পাকা ধানক্ষেত। কোথাও কোথাও শুধু পাকা ধানক্ষেত। আগাম ধান কাটা নিয়ে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাকা ধান কাটছেন কৃষক। আবার কোথাও কোথাও যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটা হচ্ছে।
এদিকে আগাম ধান কাটা শুরু হওয়ায় কার্তিক মাসে কাজহীন থাকতে হচ্ছে না শ্রমিকদের। অনেকে জমিতেই চট বিছিয়ে তার ওপর মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করার কাজ সেরে নিচ্ছেন। নারীরা মাড়াই করা ধান বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করছেন।আবার কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের পর শুকানোর কাজে ব্যস্ত।
আবার কেউ কেউ আগাম ধান কাটা শেষে শীতকালীন শাক-সবজি যেমন আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন।
স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের আগাম আমন ধান রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এই ধান পাকে। এ আগাম ধান কাটার পর সরিষা, আলুসহ নানা রকম রবি শস্য আবাদ করে থাকেন চাষিরা।
উপজেলার কৃষকেরা বলেন, বিভিন্ন খাতে ধান চাষাবাদে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন খরচ নিয়ে কৃষকদের আর ভাবতে হচ্ছে না।
উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের শিক্ষক এনামুল হক বলেন, এ বছর বন্যার পরও সময় সময় বৃষ্টি হওয়ায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমলের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকেরা ভালো ফলন ও বেশি দাম পেয়ে খুশ মেজাজ রয়েছেন। খরা ও রোগবালাই মুক্ত থাকায় এবার উপজেলায় আমনের দ্বিগুণ ফলন হবে।
মোজাফফর ইউনিয়নের কৃষক হুমায়ুন কবির জানান, এ বছর আগাম আমন ধানের বাম্পার ফলনে খুশি কৃষকেরা। তিনি ৮ বিঘা জমিতে ১০৩, ৮৭, ৪৯-সহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ২০ মণ করে হবে। তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তিনি নিজে পরিশ্রম করায় খরচের পরিমাণ অনেক কম হয়েছে। এ বছর ধানের দাম বেশি হওয়ায় তিনি খুবই খুশি।
গন্ডা ইউনিয়নের কৃষক সুলতান মাহমুদ বলেন, আমি এ বছর উচ্চ ফলনশীল ব্রি ৯৫, ৯৬, ৯২ চাষ করেছি। এবার প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ মণ ধান পেয়েছি। যদিও বিঘা প্রতি খরচ ছিল ১০-১২ হাজার টাকা, আর প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১১৫০-১২০০ টাকা। তবে এই দামে ভালো লাভের আশা করছি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৩৫০ হেক্টর। গত সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ পরে উপজেলাজুড়ে মাঠে মাঠে আমন ধান কাটার ধুম পড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, কেন্দুয়াতে.তিন হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের ধান চাষে কৃষকেরা লাভবান হন। সেজন্য তাদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। শনিবার পর্যন্ত ১০ শতাংশের বেশি আগাম ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধারণা করা যায়, আগাম ধান ও রবি ফসলের চাষ বাড়বে। তাছাড়া এখানকার মাটি আগাম জাতের ধান ও রবি ফসল চাষের উপযোগী। আগাম আমন ধান কেটে কৃষকেরা আলু, সরিষা জাতীয় রবি ফসল চাষ করবেন। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।