South east bank ad

সম্প্রীতির আলোয় উদ্ভাসিত হোক প্রিয় বাংলাদেশ

 প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ইসলাম ও জীবন

দুর্গাপূজায় কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা, আবার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশে আবার কলঙ্কের দাগ লেগেছে। ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে গুজব তুলে বারবার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা রাষ্ট্রের মৌলিক চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যে আঘাত ও বিশ্ব দরবারে সুনাম নষ্ট হচ্ছে।বিচারহীনতার কারণেই এ ধরনের হামলা। এভাবে সম্প্রীতি নষ্ট হলে ধ্বংস হবে দেশ। হামলা বন্ধে দলমত নির্বিশেষ সব মহল থেকে কঠোর আইন করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। এ ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না।

আজ ১২ রবিউল আউয়াল ও ২০ অক্টোবর।

একই দিনে পালিত হচ্ছে তিনটি ধর্মের তিনটি উৎসব। তবে কেন এমন হানাহানি? কেন সাম্প্রদায়িকতা বা সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা?

চলুন জেনে নেই আজ কোন ধর্মের কি উৎসব।

আজ ১২ রবিউল আউয়াল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস । এ দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালিত হয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের পরিবেশে দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এক হাজার ৪৫১ বছর আগের এই দিনে সৌদি আরবের মক্কা নগরে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্ম নেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের একই দিনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।

ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে মসজিদে-মসজিদে এবং নিজ-নিজ বাসায় কোরআন খতম ও জিকির আজকারের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের বিশেষ রহমত কামনা করেন।

দিবসটি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পক্ষকালব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলাসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনীর ওপর পক্ষকালব্যাপী আলোচনা সভা ও মাহফিলসহ বিশেষ কর্মসূচি গতকাল সন্ধ্যা থেকেই পালন করা শুরু হয়েছে।

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালা।

মঙ্গলবার বাদ মাগরিব বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে।

অপরদিকে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় পালিত হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজা।

বুধবার দিনভর রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দির, রামসীতা মন্দির, পঞ্চানন্দ শিব মন্দির, গৌতম মন্দির, রাধা মাধব বিগ্রহ মন্দির, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির এবং পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, ফরাশগঞ্জ, লক্ষ্মীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় লক্ষ্মীপূজার আয়োজন করা হয়েছে। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন আচার, অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতেও পালিত হচ্ছে লক্ষ্মীপূজা।

শাস্ত্রমতে, লক্ষ্মী ধনসম্পদ তথা ঐশ্বর্যের দেবী। এছাড়াও উন্নতি, আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, দানশীলতা, সাহস ও সৌন্দর্যের দেবীও তিনি। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে হিন্দু সম্প্রদায় লক্ষ্মীপূজা উদযাপন করে থাকে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসবটি কোজাগরি লক্ষ্মীপূজা নামেও পরিচিত। শারদীয় দুর্গাপূজার পর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব এই পূজা।

অন্যদিকে পালিত হচ্ছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা’ ও ‘কঠিন চীবর দান’ উৎসব।
বৌদ্ধ ধর্ম মতে, এই পুণ্যময় পূর্ণিমা তিথিতে মহামানব গৌতম বুদ্ধ ভারতের সাংকাশ্য নগরে অবতরণ করেন। মানবজাতির সুখ, শান্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে দিকে দিকে স্বধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ভিক্ষু সংঘকে নির্দেশ দেন। একই দিনে তার তিন মাসের বর্ষাবাসের পরিসমাপ্তি ঘটে।

দিনটি উপলক্ষে ফানুস উড়ানোসহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নানা ধরনের উৎসবের আয়োজন রয়েছে।

মহামতি গৌতম বুদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় বিশ্ব গঠনে আজীবন সাম্য, মৈত্রী, মানবতা ও শান্তির অমিয় বাণী প্রচার করে গেছেন। তার আদর্শ ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল ও মানবিকতায় পরিপূর্ণ। বুদ্ধের অহিংস বাণী ও জীবপ্রেম আজও বিশ্বব্যাপী বিপুল সমাদৃত।

কঠিন চীবর দানকে বলা হয় দানশ্রেষ্ঠ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে এ দানোৎসব সবার মধ্যে গড়ে তোলে ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতি। ত্যাগ, সংযম, নিয়মানুবর্তিতা আর কঠোর ধ্যান সাধনার মাধ্যমে উদযাপিত ‘কঠিন চীবর দান’ ভক্তদের বৌদ্ধের প্রকৃত অনুসারী হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এই উৎসব ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত।

যে দেশে সব ধর্মের মানুষ এক সাথে বসবাস করে থাকে, এক সাথে সামাজিকতা করে থাকে, সেখানে কে বা কাদের মদদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে বিচারের কাঠ গড়ায় দাড় করানো এখন সময়ের দাবী।

আসুন, এই দিনটিকে উপলক্ষ করে সবাই আবার সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

BBS cable ad