রাষ্ট্রপতির কাছে ইন্দোনেশিয়া ও কাতার রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হেরু হারতান্তো সুবোলো ও কাতারের রাষ্ট্রদূত সেরায়া আলী এমএস আল-কাহতানি।
গতকাল বুধবার (২ মার্চ) বিকেলে বঙ্গভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের স্বাগত জানানোর পর পরিচয়পত্র দুটি গ্রহণ করা হয়।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, পরিচয়পত্র গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতি দেশ দুটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশংসা করেন এবং বিশেষ করে পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে দূত হিসেবে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি এখানে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনকালে দেশ দুটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
পরিচয়পত্র পেশ করার পর ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে ইন্দোনেশিয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠককালে হামিদ ১৯৭২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে ইন্দোনেশিয়ার স্বীকৃতিদান এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দোনেশিয়ার নেতা ড. সুকর্নোর মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা স্মরণ করে উল্লেখ করেন যে, উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দিনে দিনে শক্তিশালী হচ্ছে।
দুই দেশ যৌথভাবে এ বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে বলে তিনি আশা করেন।
২০১৭ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইন্দোনেশিয়া সফর এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোর বাংলাদেশে সফরের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই পারস্পরিক সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
রাষ্ট্রপ্রধান উভয় দেশে বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রেসসচিব রাষ্ট্রপতির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে ইন্দোনেশিয়ার জন্য বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে কৃষিপ্রক্রিয়াকরণ, হালকা-প্রকৌশল, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পর্যটন খাতে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মর্যাদার সঙ্গে তাদের স্বদেশে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার অব্যাহত সমর্থন কামনা করেন।
পরে কাতারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠককালে আবদুল হামিদ দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের সম্ভাবনাসমূহ অন্বেষণ করতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে ঘন ঘন উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময়ের ওপর জোর দেন।
রাষ্ট্রপতি ঢাকায় নতুন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন।
কাতারে জনশক্তি রপ্তানি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক সেখানে কাজ করছে এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
কাতারে ফিফা ২০২২ বিশ্বকাপের (নভেম্বর-ডিসেম্বর) উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি জনশক্তি সেখানে নির্মাণ প্রকল্পে অংশ নিয়েছে।
তিনি পারস্পরিক সুবিধার জন্য দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
হামিদ বাংলাদেশে জাহাজনির্মাণ, ভারী যন্ত্রপাতি, নির্মাণ, ইলেকট্রনিক, টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক (আরএমজি), পাটের তৈরি পণ্য, ওষুধ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য এখানে বিনিয়োগের জন্য কাতারের বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়েও তথ্য বিনিময় হয়।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূতদ্বয় রাষ্ট্রপতিকে বলেন যে, তারা তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সরকারকে তাদের সম্ভাব্য সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবেন।
বঙ্গভবনের মুখপাত্র বলেন, রাষ্ট্রপতি হামিদ দেশ দুটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশে তাদের দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রদূতদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ সময় রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাষ্ট্রদূতদ্বয় বঙ্গভবনে পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) একটি দল অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রদূতদের গার্ড অব অনার প্রদান করে। সেনাবাহিনীর ব্যান্ডের দ্বারা সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয় এবং রাষ্ট্রদূতদ্বয় গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন।