ফুটপাত দখলমুক্ত ও আধুনিক ঢাকা গড়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা মহানগরীকে সীমিত শক্তি দিয়েই যতদূর সম্ভব বসবাসের উপযোগী করার জন্য তার সরকারের প্রচেষ্টার উল্লেখ করে ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে এবং পথচারীদের চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরো উন্নয়নের জন্যও সংশ্লিষ্ট মেয়রকে নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্ট, যখন তারা কোনো প্ল্যান করবেন অন্তত ফুটপাতটা যেন মানুষের হাঁটার যোগ্য থাকে এবং সেটা যেন দখল না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিয়েই করতে হবে।
রোববার ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১)’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডিএনসিসি’র ৪৪ নং ওয়ার্ডস্থ কাঁচকুড়া হাইস্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
ঘনবসতিপূর্ণ হরিরামপুর এক সময় অত্যন্ত অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার মান আরো উন্নত হবে এবং মানুষ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে পারবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরটাকে সীমিত শক্তি দিয়েই যতদূর সম্ভব আধুনিকায়ন করা, সবুজায়ন ও বসবাসের উপযোগী করার আমরা চেষ্টা করছি। নতুন ইউনিয়নগুলো যুক্ত করার মাধ্যমে ১৮টি ওয়ার্ড করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে খেলার মাঠ, পাবলিক টয়লেটসহ নানা নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির জন্য যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এই নতুন ঢাকা আরো সুন্দর হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কেননা এই কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নও তার হাতেই সৃষ্টি এবং যখনই তাদের কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তারা তা সুষ্ঠু ভাবেই সম্পন্ন করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় তারা জনগণের পাশে থেকে সেবা করে যাচ্ছেন।
তার সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আজকে একটা সম্মানজনক জায়গায় আমরা আসতে পেরেছি। যেটা ধরে রেখেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের নাগরিক সুবিধাটাও বাড়াতে হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং স্থানীয় মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম জাকারিয়া হোসেন প্রকল্পের ওপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠনের সময় তার একটাই লক্ষ্য ছিল এদেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করা। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলবে।
অগ্নিঝরা মার্চ মাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন এবং ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা-সেই স্মৃতি বুকে নিয়েই আজও আমরা বেঁচে আছি, এগিয়ে যাচ্ছি, সেই চেতনা থেকেই আমরা দ্রুত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসার প্রেরণা পাচ্ছি।
বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তারা বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই আজকে দেশের উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে। যেন, এর প্রত্যেকটা নাগরিক এখনকার নাগরিক সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারে এবং উন্নত জীবন পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঢাকা শহর এক সময় চারিদিকে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু এবং শীতলক্ষ্যা পরিবেষ্টিত একটি সুন্দর শহর ছিল, যা ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং শহরমুখী জনতার চাপ এই শহরকে ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলেছে।
বিভিন্ন খাল পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়ায় তিনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আসলে সব থেকে খারাপ যেটা হয়ে গেছে, অতীতের এই বক্সকালভার্টগুলো নির্মাণ করায়। যেখানে খাল রয়েছে সেখানে খালটা রেখে দুপাশে রাস্তা করা যেত। পিলার দিয়ে ওপর দিয়েও এলিভেটেড রাস্তা করা যেত। কিন্তু বক্সকালভার্ট করার ফলে সেখানে যেমন ময়লা জমছে তেমনি জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে এজমালি সম্পত্তির মতো খাল দখল হয়ে ঘর-বাড়ি বা স্থাপনা বা দোকান-পাট তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের যেমন রক্ত প্রবাহের জন্য ধমনি থাকে একটি শহরেরও তেমনি শিরা বা ধমনি হিসেবে কাজ করে এই খালগুলো। কাজেই সেটা উদ্ধার করা একান্ত অপরিহার্য।
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ’৯৬ সালে সরকারে এসেই তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্লাট নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শুরুটা আমরা করেছিলাম, কিন্তু, মাঝে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেগুলোকে এমনভাবে লুটে খেল যে, একটি বিল্ডিংও খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারল না। একটা আরেকটার ওপর ঢলে পড়ে যাচ্ছিল।
তখনকার বিএনপির সিটি মেয়র এবং সংশ্লিষ্টরা এই প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে পুরো প্রকল্পের বারোটা বাজিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা কেবল উদযাপনের মধ্যদিয়ে নয়, জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করে গেছেন এবং তার প্রতিটি নাগরিক যেন সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমার লক্ষ্য। সেজন্য সবাইকে আমরা ঘর করে দিচ্ছি।
এ সময় কোভিড-১৯ প্রতিরোধে তার সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশব্যাপী বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন প্রদানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।