এত জুলুম কি আল্লাহ ছাড় দিবেন?
আজকাল এরকম সংবাদ শুনতে পাওয়া যায় যে, বেশ কয়েক বছর বাড়িতে ভাড়া থাকার পর, সেই ভাড়াটিয়া জাল দলিল তৈরি করে, সন্ত্রাসীদের সাহায্যে বাড়িওয়ালাকেই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে কিংবা বাড়ি দখল করার জন্য বাড়ির মালিককেই হত্যা করে ফেলেছে।
যাই হোক, শুরুতেই রূপক অর্থে একটা গল্প বলি। আমি আপনাকে মেরে ফেলে আপনার জায়গা জমি দখল করতে চাই। আপনি যদি চান, প্রতিবাদ করতে পারেন। তবে শর্ত হচ্ছে, আপনি আমার দিকে পাথর ছুঁড়ে মারবেন। আর আমি আপনার দিকে ট্যাঙ্কের গোলা মারবো।
কি মন খারাপ হয়ে গেল? শুধু পাথর ছুঁড়ে আপনি খুশি হচ্ছেন না, তাইতো? ঠিক আছে। তাহলে আপনি নিজের বানানো রকেট অনেক দূর থেকে আমার মরুভূমিতে নিক্ষেপ করতে পারেন ( সেটা অবশ্য আমি আকাশেই ধ্বংস করে দিতে পারি) ।
আর আমি বিমান থেকে আপনাকে আর আপনার স্থাপনা লক্ষ্য করে অত্যাধুনিক বোমা নিক্ষেপ করব।
অন্যরা আমার এই কাজকে অত্যাচার কিংবা জুলুম যাই বলুক, আমি এসবের নাম দিলাম যুদ্ধ। তাহলে আসুন, যুদ্ধে নেমে পরি।
আপনি রাজি না থাকলেও আমার আমার ট্যাঙ্ক আর যুদ্ধবিমান প্রস্তুত রয়েছে। আপনি দুই হাতে দুইটা পাথর নিয়ে রাস্তায় আসুন।
বর্তমান বিশ্ব নিয়ে যারা সামান্যতম খোঁজ-খবর রাখেন, গল্পের মর্মার্থ বুঝতে কারো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ঈদের দিনেও ফিলিস্তিনে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। কেউ কেউ লিখছেন, ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। আবার কোথাও দেখানো হচ্ছে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে।
অথচ এই সংঘর্ষ কিংবা যুদ্ধের কথা বলা কতটা সমীচীন? নাকি এসব বিষয় প্রচার করে, ফিলিস্তিনিদের মারার নতুন ফন্দি তৈরি করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে হালাল করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
কারণ সংঘর্ষই যদি হতো, তাহলে ফিলিস্তিনের দশজন লোক মারা গেলে, ইসরায়েলের অন্তত আটজন লোক মারা যেত। ফিলিস্তিনের দুইটা বাড়ি বিধ্বস্ত হলে, ইসরায়েলের একটা বাড়ি বিধ্বস্ত হত। ফিলিস্তিনে একশত বোমা আঘাত হানলে, ইসরায়েলে তো সত্তরটা বোমা আঘাত হানার কথা।
এরকম কি হচ্ছে? না, এরকম কিছুই হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনের ঘুমিয়ে থাকা শিশুদের উপর বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, শিশু মারা যাচ্ছে। যুবকদের ধরে নিয়ে যখন ট্যাংকের সামনে দাঁড় করানো হয়, তখন সেই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি যদি হাতে একটা পাথর নিয়ে ট্যাংকের দিকে নিক্ষেপ করে, তাহলে কি তাকে সংঘর্ষ বলা যায়?
যুগ যুগ ধরে বসবাস করা ফিলিস্তিনিদের অস্ত্রের মুখে নিজেদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে, আর বাড়ি থেকে যদি কোন ফিলিস্তিনি বের হতে না চায়, তখন সেটাকে বলছি সংঘর্ষ। কতটা নির্মম আমাদের চিন্তা ভাবনা!
ইসরায়েলের ইচ্ছা হলে, ফিলিস্তিনিদের পানি বন্ধ করে দিচ্ছে, রাস্তায় যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিচ্ছে, খাবার সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে, মসজিদে ঢুকে গুলি করছে। সমগ্র বিশ্ব নির্বিকার। অথচ, ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনিরা নির্মম অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। যারা এই নির্মম অত্যাচার, জুলুম করে চলছে, আল্লাহ কি তাদের ছাড় দিবেন?
লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।