বড় বাজারে অস্থিরতা গতিহীন অপ্রচলিত বাজার

দেশের রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রাজনীতির কারণে বেড়েছে অস্থিরতা। বিশেষ করে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের কবলে পড়েছে বাংলাদেশসহ বৃহৎ পোশাক রফতানিকারক দেশগুলো। কভিড মহামারীর ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের উত্তাপের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় কয়েক বছর ধরেই মন্থর বিশ্ব বাজার ব্যবস্থা। পোশাক রফতানির সবচেয়ে বড় দুই গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে অস্থিরতার কারণে বিকল্প বাজার খুঁজছে বাংলাদেশ। তবে তাতেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। জাপান ও ভারতের মতো অপ্রচলিত বাজারগুলোয় বাংলাদেশের রফতানি কিছুটা বাড়লেও গতি মন্থর। গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এ বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৩১৯ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বসেছে অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক। তবে ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য এ কার্যক্রম স্থগিত করলেও এরই মধ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে পণ্য রফতানি বাড়াতে নতুন বাজারের ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এশিয়ায় রফতানির জন্য বড় বাজার রয়েছে। চীন বছরে ২ হাজার ৮০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। ভারত আমদানি করে ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত চীনে ১ বিলিয়ন ও ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের কম রফতানি করে। এসব বাজারে মনোযোগ দেয়া হলে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে অপ্রচলিত বাজারের শীর্ষে থাকা ১৫টি দেশের মধ্যে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঁচটি দেশে। এ নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সর্বোচ্চ রফতানি কমেছে মালয়েশিয়ায় ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি কমেছে রাশিয়ায় ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটিতে রফতানি কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে অপ্রচলিত বাজারে ৫১২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এ রফতানি গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হওয়া ৪৮০ কোটি ডলারের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। অথচ চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক রফতানিতে ইইউতে ১১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ শতাংশ ও কানাডায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ইইউতে ৫০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১১ শতাংশ, কানাডায় ৩ শতাংশ এবং অপ্রচলিত বাজারে ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অপ্রচলিত বাজার জাপান। দেশটিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় শীর্ষ বাজার অস্ট্রেলিয়ায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৬৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের তৃতীয় শীর্ষ অপ্রচলিত বাজার ভারত। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশটিতে ৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। চতুর্থ শীর্ষ বাজার তুরস্ক, যেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এক্ষেত্রে রফতানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে তুরস্কের কাছাকাছি তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়, ৩৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।