শিরোনাম

South east bank ad

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে নেই দিকনির্দেশনা

 প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   গার্মেন্টস/টেক্সটাইল

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে নেই দিকনির্দেশনা

নির্বাচিত সরকারের ক্ষেত্রে বাজেটের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন আমরা চার বছর ধরে দেখি। কারণ এক বছরের বাজেটে সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সম্ভব না।
এই বাজেটের সেই রাজনৈতিক চরিত্র নেই। কোনো প্রতিশ্রুতি এই সরকার আগে দেয়নি, তবে তারা বলেছে সংস্কার করবে।

যে সংস্কারগুলো নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে, তা হলো রাজনৈতিক সংস্কার। কিন্তু এ দেশে বহুমাত্রিক সংস্কার দরকার। সাধারণ মানুষ এমন বাজেট চায়, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, এবারের বাজেট অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, উচ্চাভিলাষীও নয়। এবারের বাজেট ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। সমস্যা হলো, বাজেটের একটা রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য থাকে। সেই চরিত্রের বৈশিষ্ট্য যখন দাঁড় করানো হয়, তখন একটি দেশে অবাধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়।

সেই নির্বাচনের আগে প্রতিটি রাজনৈতিক দল একটি ইশতেহার দেয়। সেখানে তারা বলে, দেশের মানুষ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে জীবনমান উন্নয়নের জন্য, প্রবৃদ্ধির জন্য আমরা এই কাজগুলো করব। কোনো দল যখন ভোটে জেতে, তখন জনগণ তাদের ইশতেহার যাচাই করে দেখে। তারা বুঝতে চায়, যেসব অঙ্গীকার নির্বাচনের আগে জাতির কাছে করা হয়েছে, সেগুলো বাজেটে নিয়ে আসা হয়েছে কি না।
নতুন বাজেটটি সংকুচিত ধরনের বাজেট।

গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আকার কমানো হয়েছে। বাজেট দেশের পুরো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড না। বাজেট হলো আয় ও ব্যয়ের হিসাব। বাংলাদেশের মোট জিডিপি যদি দেখি, এটা হলো ৫০০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাজেট মোট জিডিপির ১২-১৪ শতাংশ। একটা উন্নত দেশের বাজেট মোট জিডিপির ২০ থেকে ২২ শতাংশ হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে গড়ে তা ১১ থেকে ১২ শতাংশ। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। মজুরির হার বাড়ছে মাত্র ৭ শতাংশ। একটা দেশে মজুরির হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতি যদি বেশি থাকে, তাহলে তার অর্থ আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। আয় বেশি না হলে সঞ্চয় বাড়বে না। বিনিয়োগও হবে না। সরকার বলছে, মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। সে ক্ষেত্রে সঞ্চয় হবে আধা শতাংশ। যে সঞ্চয় হবে, তা ব্যাংকে রাখলে বিনিয়োগ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারবে। সঞ্চয় না বাড়লে বিনিয়োগ হবে না। বিনিয়োগের জন্য একটা সুস্থির পরিবেশ দরকার। দেশে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকার বলেছে, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমরা দেখতে চাই, বিনিয়োগ কতটুকু বৃদ্ধি পায়।

যখন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে, তখন ওই সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। দায়বদ্ধ থাকার অর্থ হলো, জনগণ যেটা চায় এবং নেয়, সেটা দিতে সরকার বাধ্য থাকে। এটাই হলো গণতন্ত্র, যা সামাজিক উন্নয়নের, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একমাত্র আস্থা।

রাজনীতি অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। আবার অর্থনীতি রাজনীতিকে পরিশীলিত করে। এই মুহূর্তে রাজনীতি নেই, অর্থনীতি কোন দিকে যাবে—এটা বলা খুব মুশকিল। বাজেটের মাধ্যমে কিছু সংস্কার আমরা আশা করি। আমরা সংস্কার সংস্কার করছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সংস্কারের দেখা পেলাম না। কতগুলো সংস্কার আছে, সেগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোনো বিরোধ নেই; যেমন—শিক্ষার সংস্কার। দেশে যে শিক্ষাব্যবস্থা আছে, তার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নেই। আমরা শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। দেশে অশিক্ষিত বেকারের চেয়ে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার করা যাবে না—এমন কথা তো কেউ বলেনি। চাইলেই অসংখ্য সংস্কার করা যায়। এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার আমার চোখে পড়েনি।

এমন বাজেট প্রয়োজন, যা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে। কিন্তু বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ সঞ্চয় নেই। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কম। দেশের সঞ্চয় যদি না থাকে, তাহলে বিনিয়োগ হবে না। যেকোনো দেশের বিনিয়োগের গড় ৯৭ শতাংশ আসে তার নিজস্ব সঞ্চয় থেকে। বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, সঞ্চয় কমে যাচ্ছে, বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাচ্ছে। এখন বিনিয়োগ যদি কমে যায়, তাহলে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়বে। এতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার অর্থ এ দেশে কেউ আর্থিক মূলধন বিনিয়োগ করবে না। দেশের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের সংস্কার যদি তাঁরা করেন, উনাদেরও আমরা তাহলে মনে রাখব।

BBS cable ad

গার্মেন্টস/টেক্সটাইল এর আরও খবর: