দেশের ৮ কোটি শ্রম শক্তির সুরক্ষায় কাজ করবে শ্রম সংস্কার কমিশন
দেশের প্রায় ৮ কোটি শ্রম শক্তির সুরক্ষায় সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রম সংস্কার কমিশন একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করে তা সরকারের কাছে জমা দেবে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগামী ৯০ দিনের মধ্যেই যাতে শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাবসহ শ্রম খাত সংস্কারের প্রতিবেদন জমা দেয়া যায় সে লক্ষ্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগরস্থ শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রথম সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড.মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র টিইউসি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম নাসিম, এমপ্লয়ার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি এম কামরান টি রহমান, শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতার প্রমুখ।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘২০২২ সালের শ্রম জরিপ অনুয়ায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দেশে প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ শ্রমিক প্রাতিষ্ঠানিক আর ৮৫ শতাংশ শ্রমিকই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত।’
শ্রমজীবী মানুষের শোভন কাজ ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় লক্ষ্যে জাতীয় মর্যাদাপূর্ণ ন্যূনতম মজুরি কাঠামো গঠন, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, শোভন ও মর্যদাপূর্ণ কর্মসংস্থান, কাজের নিরাপত্তা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা, সংগঠিত হওয়া ও দরকষাকষির অধিকার, অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের চর্চা, শিল্পখাত বিকাশের স্বার্থে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক নীতি পর্যালোচনা ও সুপারিশসহ ন্যায্য অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশন প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে বলে কমিশনের সদস্যরা জানান।
কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শ্রম ও শিল্প সম্পর্ক উন্নয়নে শ্রম সংস্কার কমিশন সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণে সকল মহলের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া হবে।’
কর্মসংস্থান ও চাকুরির নিরাপত্তা, মজুরি ও ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, অভিবাসী শ্রমিক সুরক্ষা, শিশুশ্রম নিরসন, শ্রমজীবী কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা, পিছিয়ে পড়া শ্রমিক যেমন- নারী, কৃষি, গ্রামীণ শ্রমিক, গৃহশ্রমিক, খামার ভিত্তিক, মৌসুমী, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর শ্রমজীবী গোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা ও কল্যাণে শ্রম সংস্কার কমিশন কাজ করবে।
কমিশনের সুপারিশ প্রণয়নের ভিত্তি হবে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, ঘোষণা ও নীতিমালা, মানবাধিকার, পরিবেশ, অভিবাসন ও ব্যবসা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দলিলাদি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি ২০৩০), এলডিসি উত্তরনে অনুসরণীয় বিষয়াদি এবং উন্নয়ন সহযোগী ও ক্রেতা রাষ্ট্রসমূহের প্রত্যাশা ও নীতিমালা।
সুপারিশ প্রণয়নে মিডিয়া প্রতিবেদন, সারাদেশে অংশীজন ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে মতামত গ্রহণ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে মতবিনিময় এবং আইএলওসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠনসমূহের সাথে মতবিনিময় করার একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
গত ১৮ নভেম্বর শ্রম খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১০ সদস্যের এ শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে।