South east bank ad

বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাব’ গড়ে তুলছে দক্ষ যুবসমাজ

 প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাব’ গড়ে তুলছে দক্ষ যুবসমাজ

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

দক্ষিণ সুদানের ওয়াও প্রদেশে তরুণ সমাজকে বিশৃঙ্খল জীবন থেকে ফেরাতে কাজ করছে ‘বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাব’। গড়ে তোলা হচ্ছে দক্ষ যুব সমাজ। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ অব্যাহত আছে। যুব সমাজ এখন অস্ত্রের পরিবর্তে কলম ধরছে।

দক্ষিণ সুদানের মানুষ খুবই উগ্র ও উচ্ছৃঙ্খল। তাদের জাতিগত দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে কোন্দল ও অস্ত্রের ঝনঝনানি লেগেই থাকে সবসময়। সেখানে খাদ্যসংকট বিরাজ করায় লোকজন অন্যের কাছ থেকে চেয়ে খাবার খায়, অথচ তাদের প্রচুর সম্পদ রয়েছে। পড়াশোনার তেমন সুযোগ পায় না সুদানের লোকজন। তবে এদের প্রায় প্রত্যেকের হাতে রয়েছে আধুনিক অস্ত্র।

এই জনগোষ্ঠীকে বশে এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা এবং সামাজিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ হিসেবে ‘বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয় যুবসমাজকে খেলাধুলার পাশাপাশি নানামুখী কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করছে ক্লাবটি। এভাবে যুবকরা হয়ে উঠেছে পরিশ্রমী। এখন অস্ত্রের প্রতি আসক্তির পরিবর্তে মানুষের প্রতি তৈরি হচ্ছে মায়া-মমতা।

এদিকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বই বিতরণ করছে ক্লাবটি। প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ, গরুর চিকিৎসা, নারীদের দেওয়া হচ্ছে সেলাই প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার ও ভ্যাটেরিনারি প্রশিক্ষণ, স্থানীয়ভাবে আয়োজিত কালচারালসহ বিভিন্ন স্টলের আয়োজন করছে ক্লাবটি। সুবিধাবঞ্চিতদের স্বাস্হ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ দক্ষিণ সুদান সফরকালে গত ২১ ফেব্র‚য়ারি ওয়াও প্রদেশে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাব’ উদ্বোধন করেন। ইতিমধ্যে ক্লাবটির কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেছে। দক্ষিণ সুদান সরকারের পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কর্মকর্তারাও ক্লাবটির কর্মকাণ্ডের ভূয়সি প্রশংসা করেছেন।

দক্ষিণ সুদানের জাতীয় সরকার, প্রাদেশিক সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ দেশটির আপামর জনগণ অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, কীভাবে সভ্য, সামাজিক ও মানবিক হতে হয়। ‘বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাব’ এমন কোনো সেবা নেই যা করছে না। ক্লাবটি কৃষকের মধ্যে বীজ বিতরণ করছে।

কোভিড সচেতনতা কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে। মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্হ্য সচেতনতা প্রোগ্রামও করছে ‘বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাব’। মানসিক স্বাস্হ্য ও টিকা প্রদান করছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প, চশমা বিতরণ, জেলখানায় নারী কয়েদিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এসব কাজ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সুদানবাসীর মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ সুদানে ট্রাফিক পুলিশের জীবন অনেক কষ্টের। রাস্তায় দাঁড়ানোর শেড ছিল না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজস্ব অর্থায়নে ১০টি ট্রাফিক বক্স করে দিয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাবের পরিচালক রবার্ট বলেন, এখানে আসার পর থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের আন্তরিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের তরুণদের জ্ঞানার্জন, সংস্কৃতি, ক্রীড়ায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে তারা যে পরিমাণ সহযোগিতা করেছে তাতে আমরা অভিভূত।

আমরা যে সহযোগিতা পাচ্ছি তাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছে। এটা নিশ্চিতভাবেই আমাদের দুই দেশের মধ্যে পারস্পারিক সম্মান ও সংহতি বৃদ্ধি করবে। আপনাদের এই সদয় সহযোগিতাকে আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করি এবং গোটা জাতির হূদয়ে তা চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রবার্ট বলেন, বাংলাদেশ-সাউথ সুদান ইউথ ক্লাব যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাতে দক্ষিণ সুদানের প্রজন্মের পর প্রজন্ম উপকৃত হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্হিত ছিলেন দক্ষিণ সুদানের সংস্কৃতি ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রী মো. আলী গণি ও ক্রীড়া মহাপরিচালক গ্যাব্রিয়েল সুসানসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দক্ষিণ সুদানবাসীর সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে যা প্রশংসার দাবিদার।

BBS cable ad

আন্তর্জাতিক এর আরও খবর: