বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে সিঙ্গাপুর
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
করোনা ভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ তৈরিতে অতিপ্রয়োজনীয় খাতগুলোয় অভিবাসী শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সিঙ্গাপুর। গত শনিবার (০১ জানুয়ারি) দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং নতুন বছরের শুভেচ্ছাবার্তায় অভিবাসী শ্রমিক নেওয়ার এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, সিঙ্গাপুর অতিপ্রয়োজনীয় অভিবাসী কর্মীদের নিয়ে আসবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মেধাবী কর্মীরা যেন সিঙ্গাপুরে সমাদৃত বোধ করেন, তা নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে তারা সিঙ্গাপুরবাসীর পরিপূরক হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিঙ্গাপুর সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও ফিলিপাইন থেকে শ্রমিক, দক্ষ জনশক্তি ও পেশাজীবীদের নিয়ে থাকে। তবে কোনো দেশ থেকে কতসংখ্যক কর্মী নেওয়া হতে পারে সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি।
লি সিয়েন বলেন, ২০২২ সাল হবে রূপান্তরের সময়। দেশের অর্থনীতি দৃঢ়ভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং এ নগর রাষ্ট্র বাকি বিশ্বের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করছে।
আগামী বছর সিঙ্গাপুরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩-৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করে লি বলেন, নতুন কোনো বাধা ছাড়াই সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সঙ্গে ধাপে ধাপে। দেশটির সরকার ‘দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আগাম পরিকল্পনা নিয়েছে’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ওমিক্রনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছি। সে কারণে আমরা কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারি যে, সামনে যে ধরনের বাধাই আসুক না কেন আমরা তা মোকাবিলা করব।
মহামারীপরবর্তী অর্থনীতিতে অবশ্যই নতুন প্রবৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি এবং সমৃদ্ধি আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে স্থিতিশীল বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিবেশের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে এবং এর কেন্দ্রে থাকবে মার্কিন-চীন সম্পর্ক। লি সিয়েন বলেন, বৈশ্বিক এ দুই শক্তির বিভাজন অনেক বেশি ও গভীর। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে এ দুই দেশের সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের তৎপরতা এবং বাস্তবিক সহযোগিতা বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা ২০২২ সালের প্রথম দিনে কার্যকর হওয়া আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বসহ বাণিজ্য উদারীকরণ এবং আঞ্চলিক একীভূতকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’
চীনের নেতৃত্বে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক এই ব্লকে ১০ সদস্য দেশ রয়েছে। ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বমূলক এই ব্লকে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, জাপান, লাওস, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী দক্ষিণ এশিয়ার নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে কাজের সন্ধানে যান। করোনা ভাইরাস মহামারী শুরুর পর কর্মীদের সিঙ্গাপুরে রপ্তানি হ্রাস পায়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১০ হাজার ৮৫ কর্মী সিঙ্গাপুরে যান। এর পর গত বছরের মে মাস পর্যন্ত দেশটিতে ১২ হাজার ১৩৯ বাংলাদেশি শ্রমিক গেছেন। মহামারীর কারণে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ থাকায় এর পর থেকে আর কোনো কর্মী সিঙ্গাপুরে পাঠানো যায়নি।
মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে ৪৯ হাজার ৮২৯ জন বাংলাদেশি সিঙ্গাপুর যান। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে যান ৪১ হাজার ৩৯৩ জন, ২০১৭ সালে ৪০ হাজার ৪০১ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে পাড়ি জমান।