বাংলাদেশকে রাজস্ব ও আর্থিক খাতে সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে —আইএমএফ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে রাজস্ব ও আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোয় সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।’
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে আইএমএফের ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, কর্মসূচির পরবর্তী পর্যালোচনার জন্য আইএমএফের একটি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। এবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। একটি হচ্ছে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব খাতে সংস্কার। অন্যটি আর্থিক খাতের সংস্কার।
চলমান কর্মসূচির সফলতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সংস্কারের মূল ক্ষেত্রগুলোয় কাজ চালিয়ে যেতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময় বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছতে পারে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
এছাড়া প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির বিষয়েও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আইএমএফের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশে নামতে পারে এবং পরের অর্থবছরে তা আরো কমে ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এ সংস্থা আরো জানিয়েছে, সংস্কার বাস্তবায়নের গতি ও প্রত্যাশার তুলনায় ধীর মূল্যস্ফীতি হ্রাসের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া আইএমএফ জ্বালানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা এবং বৈশ্বিক নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে সম্ভাব্য বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেছে।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে বসেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা। এবারের সভায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় ছিল সদস্যদেশগুলোর ঋণ পরিস্থিতি। সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, বিশ্বের ৮৬টি দেশ মিলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে প্রায় ১৬২ বিলিয়ন ডলার ঋণী। এর মধ্যে শীর্ষ তিন দেশই মোট ঋণের প্রায় অর্ধেকের দায়ভার বহন করছে।
সবচেয়ে বেশি ঋণী দেশ হলো আর্জেন্টিনা, যার বকেয়া ঋণ প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউক্রেন, যার ঋণ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিসর, যার ঋণ প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। এ তিন দেশ মিলেই আইএমএফের মোট বকেয়া ঋণের প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী।
আর্জেন্টিনা আইএমএফের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা দেশ। অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে দেশটি বারবার আইএমএফের সহায়তা নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা ৫৭ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ঋণ নেয়, যা আইএমএফের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। চলতি বছরের এপ্রিলে দেশটি আরো ২০ বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা কর্মসূচি পায়। এছাড়া ২০২৫ সালের অক্টোবরে ট্রাম্প প্রশাসন আর্জেন্টিনার অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে ২০ বিলিয়ন ডলারের ডলার-পেসো বিনিময় সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করে।


