আশরাফুল আহসান জিতু কে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১

বহুল আলোচিত আশুলিয়াতে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে শিক্ষককে হত্যাচেষ্টায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি আশরাফুল আহসান জিতু@ জিতু দাদা’কে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১।
“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে জঙ্গি, মাদক, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতারকরে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকা-ের সাথে জড়িত অপরাধীদেরআইনের আওতায় এনে সর্বস্তরের জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
যখনই সমাজের কোন সুধীজন, সম্মানিত শিক্ষক অথবা সম্মানিত কোন ব্যক্তি হামলার শিকার হয়েছেন অথবা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তখনই র্যাব ভিকটিমের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। গত ১৩ জুলাই ২০২১ তারিখ আশুলিয়ার সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মন নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে কলেজ প্রাঙ্গণ হতে তার মৃতদেহের খন্ডিত অংশ উদ্ধার করে তার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ০৩ অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে র্যাব।এছাড়াও,গত ১২ জুন ২০২২ তারিখ কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছাত্রী উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ০৪ শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করে স্থানীয় কিছু বখাটে। এই ঘটনায়ও জড়িত ০৪ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করে র্যাব।
গত ২৫ জুন ২০২২ তারিখ ঢাকার আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল এন্ড কলেজেরছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে গুরুতরভাবে আহত করে ঐ প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থী আশরাফুল আহসান জিতু। পরবর্তীতেতাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভারের একটি হাসপাতালে নেয়া হলে; আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুন সোমবার ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়েআশুলিয়া থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নম্বর-৮৯, তারিখ ২৬ জুন ২০২২। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুলভাবে আলোচিত হয়।উক্ত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীকে গ্রেফতারের দাবিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেবিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে র্যাব-১ উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িতকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায়গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সন্ধ্যায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এবং র্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শিক্ষক হত্যাকান্ডে দায়েরকৃতমামলার প্রধান আসামি ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু@ জিতু দাদা, পিতা-মোঃ উজ্জল হাজী, আশুলিয়া, ঢাকা’কেগ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল এন্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ঐ কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, চুলকাটা, ধুমপান করা ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়ে প্রেষণা প্রদান করতেন। এছাড়াও, তিনি উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করাসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখতেন।
গ্রেফতারকৃত জিতু বর্ণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে শিক্ষা জীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল পরে মাদ্রাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়। সে ঐ স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। সে স্কুলেসকলের নিকট একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বিরক্ত করত; স্কুল প্রাঙ্গনে সকলের সামনে ধুমপান, স্কুল ইউনিফর্ম ব্যতিত স্কুলে আসা-যাওয়া, মটর সাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত।সে তার নেতৃত্বে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। পাশাপাশি গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করত। পরিবারের নিকট তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে গ্রেফতারকৃত জিতু তার অনুসারি গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের উপর চড়াও হতো ও বিভিন্ন সময় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে হামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে শোডাউন দিত বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে ঐ স্কুলের এক ছাত্রীর সাথে গ্রেফতারকৃত জিতু’র অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা হতে বিরত থাকার বিষয়ে বর্ণিত শিক্ষক প্রেষণা প্রদান করেন। এই ঘটনায় সে তার শিক্ষকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ও ঐ ছাত্রীর নিকট নিজের হিরোয়িজম প্রদর্শন করার জন্য তার উপর হামলার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে গত ২৫ জুন ২০২২ তারিখ একটি ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণি কক্ষের পিছনে লুকিয়ে রাখে ও তার শিক্ষককে আঘাত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোনে শিক্ষককে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গ্রেফতারকৃত জিতু তার কাছে থাকা ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে অতর্কিতভাবে বেধড়ক আঘাত করতে থাকে। গ্রেফতারকৃত জিতু তার শিক্ষককে প্রথমে পিছন থেকে মাথায় আঘাত করে এবং পরবর্তীতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে।
গ্রেফতারকৃত জিতু এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করলেও পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আশংকায় সে এলাকা ত্যাগ করে। প্রথমে বাসযোগে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়ীতে রাত্রীযাপন করে। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরীঘাটে পৌঁছায় এবং ট্রলারযোগে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপণ করে। পরদিন ভোরে সে আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আতাইকুলা হতে বাসযোগে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে লঞ্চযোগে আরিচাঘাট পৌঁছায় এবং সেখান থেকে বাসযোগে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব-১ কর্তৃক গ্রেফতার হয়।