শিরোনাম

South east bank ad

রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই :সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

 প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   বিশেষ সংবাদ

রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই :সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে পর্যায়ে আছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘রিজার্ভ এখনো যা আছে, তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের সেভাবে এখনো কোনো সংকট নেই। তবে হ্যাঁ, আমরা সবসময় চেষ্টা করি যে রিজার্ভটা যেন আমাদের থাকে।’ জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে গতকাল বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সেইটুকু থাকা দরকার, যদি কোনো আপত্কালীন হয়, যেমন এই ঝড়ঝঞ্ঝা—এ রকম ক্ষেত্রে আমাদের খাদ্য কিনতে যদি ঘাটতি দেখা দেয়, সেই খাদ্য কেনার মতো, অর্থাৎ তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলারটা যেন আমাদের হাতে থাকে। ওইটা নিয়েই রিজার্ভের জন্য চিন্তা। এছাড়া রিজার্ভের এত চিন্তা নাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডলার সংকট এখন পুরো বিশ্বব্যাপী, এটা শুধু বাংলাদেশে না। প্রথম গেল করোনা অতিমারী, আর তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, আর সেই যুদ্ধের সঙ্গে স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে আজকে সারা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, হচ্ছে পরিবহন, পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে, যার কারণে ডলার সংকটটা এখন সমগ্র বিশ্বেই রয়ে গেছে।’

ত্রিদেশীয় সফরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফর প্রসঙ্গে সরকারপ্রধানের লিখিত বক্তব্যটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো।

জাপান সফর

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে আমি ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছাই।

২৬ এপ্রিল সকালে আমি জাপানের মহামহিম সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি।

মহামহিম সম্রাট আমাকে স্বাগত জানান এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীরতর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী আমাকে গার্ড অব অনার দিয়ে নিজ কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানান। এরপর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

আমার এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে। এই বৈঠকে দুদেশের মধ্যে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন, বিগ-বি প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারকরণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জাপান ওভারসিজ কো-অপারেশন ভলান্টিয়ার প্রকল্প পুনরায় চালু করা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগ, মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, ঢাকা-টোকিও সরাসরি বিমান চলাচল ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।

জাপান সরকার বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ইয়েন বাজেট সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।

বৈঠকে আমি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য জাপানের সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের এই সূচনালগ্নে উভয় দেশের মধ্যে কৃষি, মেট্রোরেল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডেশন, শিপ রিসাইক্লিং, কাস্টমস ম্যাটারস, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি, ডিফেন্স কো-অপারেশন, আইসিটি এবং সাইবার সিকিউরিটি কো-অপারেশন ইত্যাদি খাতে মোট আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এছাড়াও আমি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রূপরেখার ওপর একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করি। পরে আমার সম্মানে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নিই।

দুদেশের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক ছাড়াও কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাইকার প্রেসিডেন্ট, জেটরোর চেয়ারম্যান ও সিইও, জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (জেবিসিসিইসি)-এর চেয়ারম্যান এবং জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগ (জেবিপিএফএল)-এর প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সহধর্মিণী এবং জেবিক-এর প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

২৭ এপ্রিল টোকিওর ওয়েস্টিন হোটেলে জাপানের খ্যাতনামা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের সিইও ও ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমি মিট-এন্ড-গ্রিট অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। এরপরে আমি একই হোটেলে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে যোগ দিই। জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্ভাবনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। আমি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্জিত অভূতপূর্ব উন্নয়নের বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের আহ্বান জানাই। এ সময়ে দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্যে মোট ১১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এরপর আমি জাপানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমার্জিং সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন (মিরাইকান মিউজিয়াম) পরিদর্শন করি। বিকেলে জাপানের খ্যাতনামা স্থপতি তাদাও আনদো আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময়ে স্থপতি তাদাও আনদো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে ঢাকায় একটি চিলড্রেনস লাইব্রেরি স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

ঐদিন বিকেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্যে আমি চারজন জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদানের জন্যে আকাসাকা প্যালেসে এক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি।

সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন: আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিস্টার তাদাতেরু কোনোয়ে, প্রফেসর গিয়ালপো পেমা, রাজনীতিবিদ মিস্টার হিদিও তাকানো (মরণোত্তর) এবং ফটো সাংবাদিক মিস্টার তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)। ঐদিন বিকেলে আমি এনএইচকে এবং নিক্কেই সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাত্কার প্রদান করি।

এরপর টোকিওর ওয়েস্টিন হোটেলে আমি জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দিই।

যুক্তরাষ্ট্র সফর:

বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসের আমন্ত্রণে আমি ২৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছাই।

যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিনে ২৯ এপ্রিল অপরাহে আমার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজ ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাত্কালে তিনি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ স্থাপন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং কভিড-১৯ মহামারীকালেও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রশংসা করেন।

আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সব বাধাবিপত্তি মোকাবেলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে অভিহিত করেন। আমি আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাংলাদেশে সরকারের চলমান আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন উদ্যোগে আইএমএফের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা আমার সাক্ষাত্কার গ্রহণ করে।

১ মে সকালে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ওপর ‘Reflection on 50 years of Bangladesh-World Bank Partnership’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে আমি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করি। আমি আমার বক্তব্যে ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অভিযাত্রায় বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে দারিদ্র্য নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের সাফল্য অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য শিক্ষণীয়। ডেভিড ম্যালপাস উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

আমি অনুষ্ঠানে বলেছি, বাংলাদেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ কখনই ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ঋণের ফাঁদে পড়েনি।

১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়, তখন অনেক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রচেষ্টায় আমাদের জনগণ বিশ্বকে দেখিয়েছে যে দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে কঠিন চ্যালেঞ্জকেও অতিক্রম করা সম্ভব।

অনুষ্ঠানের শেষে আমি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসকে পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা ছবি উপহার দিই।

আলোচনা অনুষ্ঠানটি শেষে আমার ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও কানেকটিভিটি, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন কোটি মার্কিন ডলারের পাঁচটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চুক্তিসমূহে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিগুলো হলো—

১। রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডিং প্রজেক্ট: এটি ৫০ কোটি (৫০০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প। এটি ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নে প্রথম বড় বিনিয়োগ প্রকল্প, যা অভ্যন্তরীণ বন্যার বিরুদ্ধে দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নয়নে সহায়তা করবে।

২। বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (বিইএসটি) প্রকল্প: ২৫ কোটি (২৫০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প।

৩। অ্যাকসেলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (এসিসিইএসএস) বাংলাদেশ ফেজ-১: ৭৫ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার (৭৫৩ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প।

৪। ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি) প্রকল্প: এটি ৫০ কোটি (৫০০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প। দেশকে সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে সহায়তা করবে।

৫। সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন (এসএমএআরটি) প্রকল্প: ২৫ কোটি (২৫০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প।

একই দিনে আমি ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের পাঁচ দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নগাথার ওপর উপস্থাপিত একটি মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর উদ্বোধন করি। বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়।

২ মে সকালে আমার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাত্কালে আমি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বিশ্বব্যাংককে পাশে থাকার আহ্বান জানাই।

একই দিনে US-Bangladesh Business Council-এর ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার একটি একান্ত বৈঠক হয়।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে আমি মূলবক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। আমার বক্তব্যে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিবৃন্দের নিকট বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগসমূহ ও প্রণোদনার কথা তুলে ধরি এবং দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের গুরুত্বের ওপর বিশেষ জোর দিই। অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি-বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ও এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ও বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে আলোকপাত করেন।

আমার সঙ্গে US Chamber of Commerce-এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ সুজানে পি ক্লার্ক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

এছাড়া সন্ধ্যায় ‘দি ইকোনমিস্ট’ আমার একটি সাক্ষাত্কার গ্রহণ করে। ঐদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকবৃন্দ কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিই।

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি সফর উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সুসংহত অংশীদারিত্বের প্রতিফলন।


যুক্তরাজ্য সফর:

ব্রিটেনের মহামহিম রাজার পক্ষ থেকে তাঁর এবং রানী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক ও অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ এবং কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষ থেকে কমনওয়েলথ লিডারস ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আমি ৪ থেকে ৮ মে যুক্তরাজ্য সফর করি।

৫ মে বিকেলে বাকিংহাম প্যালেসে মহামহিম রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রানী ক্যামিলার অভ্যর্থনা অনুষ্ঠিত হয়। ৬ মে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে রাজা এবং রানীর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আমি অভ্যর্থনা এবং রাজ্যাভিষেক উভয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। মার্লবোরো হাউজে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ লিডারস ইভেন্টে আমি মহামহিম রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। এ সময় আমি রাজা ও রানীকে অভিনন্দন জানাই ও তাঁদের বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানাই। ৫ মে বিকেলে মার্লবোরো হাউজে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল আয়োজিত কমনওয়েলথ লিডারস ইভেন্টে অংশগ্রহণ করি।

একই দিন মার্লবোরো হাউজে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। আমি এশিয়ান ঐতিহ্যের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ঋষি সুনাককে অভিনন্দন জানাই। তিনি বাংলাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন জনগণকে সরকারি খরচে বাড়ি দেয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। আমি যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।

তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এছাড়াও তিনি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। আমি রোহিঙ্গা বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া আমি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানাই এবং তিনি তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন।

৬ মে লন্ডনে আমার হোটেল স্যুইটে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্রিটেনের রাজার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এ দুই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ রাজার কাছে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। Bangladesh-UK Climate Accord এবং Aviation Partnership দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি জানান।

যুক্তরাজ্য সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক ও রানী জেতসুন পেমা আমার হোটেল স্যুইটে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আমার ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।

৭ মে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আমাকে কমনওয়েলথের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি ডিজিটালাইজেশন, ই-গভর্ন্যান্স ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেন এবং এসব খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কমনওয়েলথের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে বিনিময়ের অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি আগামী ঈঙচ-২৮-এর আগে কমনওয়েলথের পরিবেশমন্ত্রীদের একটি সম্মেলন আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান। একই দিনে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

আমি ৭ মে লন্ডনের একটি স্থানীয় হোটেলে আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করি। এ সফরে আমি বিবিসিকেও একটি সাক্ষাত্কার দিই।

আমার এ সফরের সময় বাংলাদেশ সরকার ও যুক্তরাজ্যের সরকারের মধ্যে Aviation Trade and Investment Partnership বিষয়ে একটি Joint Communiqué স্বাক্ষরিত হয়। যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষে Minister of State in the Department for Business and Trade Lord Dominic Johnson এবং আমার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সালমান এফ রহমান বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এ Joint Communiqué-তে স্বাক্ষর করেন।

এ Joint Communiqué-তে এভিয়েশন খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতকে দক্ষ, নিরাপদ ও টেকসই করার আগ্রহ ব্যক্ত করা হয়েছে।

এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক আরো এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়াও কমনওয়েলথে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি আমার লিখিত বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

BBS cable ad

বিশেষ সংবাদ এর আরও খবর: