শিরোনাম

South east bank ad

ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা ও ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত উদ্যোক্তারা

 প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   শেয়ার বাজার

ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা ও ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত উদ্যোক্তারা

বর্তমানে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ পেলেও মাঝারি ও ছোট উদ্যোক্তারা ৫-২০ লাখ টাকার জন্য সমস্যায় পড়ছেন। এছাড়া আস্থার অভাব, আর্থিক খাতে অস্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণ আদায়ে ধীরগতি প্রভৃতি বিষয় শিল্প উৎপাদন, বিশেষ করে এসএমই খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসায় এবং ১০ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতির হার বিদ্যমান অবস্থাকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ: ঋণগ্রহীতার প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। ডিসিসিআই কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) ড. মো. ইজাজুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী আর্থিক খাতের ঋণদাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আনুষ্ঠানিক খাতকে রক্ষা করতে হবে, তা না হলে অনানুষ্ঠানিক খাতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।’

সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে আর্থিক ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দেন তিনি। সেই সঙ্গে আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট নীতির সমন্বয় ও অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করেন।

ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও ভালো অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলো চাইলেই সুদের হার কিছুটা কমাতে পারে। এর ফলে ঋণগ্রহীতারা বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।’

সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ইজাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময়ে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ কিছু পরিবারের মধ্যে কুক্ষিগত করা হয়েছিল, যার ফলে এ খাতে অস্বচ্ছতা ও অস্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভের স্থিতিশীলতা ও মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পর উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে, এর সুফল বেসরকারি খাত দেখতে পাবে।’

ইজাজুল ইসলাম বলেন, ‘আর্থিক খাতে বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশকিছু নীতিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করবে।’

তিনি জানান, গত আগস্টের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম ধাপে ২৩ হাজার কোটি টাকা এবং পরবর্তী সময়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে, এর মাধ্যমে বেসরকরি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। তার মতে, মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা এলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, সেই সুদহার বাজারভিত্তিক করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সদ্য সাবেক সভাপতি ও পরিচালক আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কেবল অদক্ষতার কারণেই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত দরে জ্বালানি ক্রয় করতে হচ্ছে আর শিল্প উদ্যোক্তাদের এজন্য উচ্চমূল্য প্রদান করতে হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের অভাবে শিল্পের উৎপাদন ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।’

আশরাফ আহমেদ জানান, ২০২৫ সালে ঋণের সুদহার গড়ে ৯-১৪ শতাংশে উন্নীত হওয়ার কারণে বেসরকারি খাতকে ১ দশমিক ৩৯ ট্রিলিয়ন টাকা অতিরিক্ত সুদ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের আস্থার অভাব, আর্থিক খাতে অস্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণ আদায়ের ধীরগতি প্রভৃতি বিষয় এসএমই খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসায় এবং ১০ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতির হার বিদ্যমান অবস্থাকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে।’ এ অবস্থায় উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সহায়ক ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে মুদ্রানীতির পাশাপাশি অন্যান্য নীতিমালার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।

স্থানীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ও জমাকৃত সুদ পরিশোধে সাত বছর মেয়াদের সময়সীমা আরো এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন তাসকীন আহমেদ। সেই সঙ্গে চলমান ঋণ শ্রেণীকরণের সময়সীমা ছয় মাস বর্ধিত করার আহ্বান জানান তিনি।

BBS cable ad