পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৩৫ শতাংশ

দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেছে। আলোচ্য সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে দশমিক ৯৬ শতাংশ। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইএক্স সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪ হাজার ৭০৯ পয়েন্ট। নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৭৮২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ৭৬২ পয়েন্ট। এছাড়া শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গত সপ্তাহে ৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ২৯ পয়েন্ট।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া মোট ৩৯৫টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৪টির, কমেছে ১৫৯টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৪২টির শেয়ারদর। আর লেনদেন হয়নি ১৮টির। গত সপ্তাহে সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন ও লাফার্জোহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ার।
ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৩২৫ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের চার কার্যদিবসে যেখানে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ২৪১ কোটি টাকা। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটিতে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি শেষে লেনদেন শুরুর পর সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজার অস্থির ছিল। তবে সাম্প্রতিক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায়ও জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি স্পষ্ট হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়। যদিও সপ্তাহের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর পরও বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকায় সপ্তাহ শেষে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়।
খাতভিত্তিক লেনদেনে গত সপ্তাহে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের আধিপত্য ছিল। লেনদেনচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। এছাড়া ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত। আর পঞ্চম স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের দখলে ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে পাঁচটি খাত বাদে সব খাতের শেয়ারেই ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এছাড়া পাট খাতে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ৩ দশমিক ১৬, সাধারণ বীমা খাতে ৩ দশমিক শূন্য ৮ এবং টেলিযোগাযোগ খাতে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন ছিল। অন্যদিকে গত সপ্তাহে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৪ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে দশমিক ৭৪ এবং ট্যানারি প্রতিষ্ঠান খাতে দশমিক ২ শতাংশ।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে ১৩ হাজার ২৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৩ হাজার ১৪০ পয়েন্ট। সিএসসিএক্স সূচক গত সপ্তাহ শেষে ১ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ১১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৮ হাজার ২২ পয়েন্ট।
সিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, আগের সপ্তাহে যেখানে মোট লেনদেন ছিল ৪০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আলোচ্য সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬২টির, কমেছে ১২৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টির বাজারদর।