পাবনায় বই প্রেমীদের ভীড়ে প্রাণবন্ত বই মেলা
রনি ইমরান (পাবনা) : পীল্লীকবি জসিম উদ্দিন বই পড়া সর্ম্পকে বলেছেন, বই জ্ঞানের প্রতীক বই আনন্দের প্রতীক। সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন,বই কিনে কেউ দেওলিয়া হয়নি।দার্শনিক লিও টলস্টয় বলেছেন, জীবনে তিনটি বস্তুই বিশেষভাবে প্রয়োজন তা হচ্ছে বই, বই এবং বই।দার্শনিক টুপার বলেছেন,একটি ভালো বই হলো বর্তমান ও চিরকালের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বন্ধু।আধুনিক সমাজতন্ত্রী চীনের জনক মাও সেতুং বলেছেন পড়, পড় এবং পড়।
সাদা পৃষ্ঠার কালো অক্ষরে চোখ বুলিয়ে আমরা কয়েক শত বছর আগের পৃথিবী ঘুড়ে আসতে পারি।বই আমাদের কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। একটি ভালো বই আমাদের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। জানতে শেখায় নিজেকে পৃথিবীকে আর মহাবিশ্বের মহারহস্যকে।বই আমাদের গড়তে শেখায়, শিখতে শেখায়।বই বুদ্ধি, জ্ঞানের আধার, অমলিন আনন্দেরও উৎস।
মহামারীময় পৃথিবীতে আলো ফুটছে, আবার মাস্কহীন ফুসফুস ভরে উঠবে নির্মল অক্সিজেনে। সাফল্যের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের হাতে করোনা টিকা একটু করে আসছে নতুন ভোর। বসন্তে বইছে নব উদ্দাম প্রাণে প্রাণে উজ্জীবিত জাগরণে ফের শুরু হয়েছে পাবনাবাসীর প্রাণের একুশে বই মেলা ২০২১। পাবনা শহরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে গত পহেলা মার্চ থেকে একুশে বই মেলা শুরু হয়েছে। ৪০ টি স্টল নিয়ে বই মেলা চলবে ১৬ ই মার্চ পর্যন্ত। মহামারী লকডাউন আর ভাইরাসময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রাণে উজ্জীবিত উচ্ছ¡াসে নিয়ে বই প্রেমীরা আসছে পছন্দের বই কিনতে। মেলার প্রথম দিনে স্টলে স্টলে বই প্রেমীরা কিনেছেন পছন্দের সব বই। অনেক দিন পর মেলা থেকে পছন্দের বই কিনেছেন আসাদুজ্জামান তিনি বলেন,অনেকদিন পর আবার শুরু হয়েছে বই মেলা পছন্দের বই কেনার আনন্দটাই অন্য রকম। শিশু তাসমিতা বেছে নিয়েছেন পছন্দের বই বিশ্ব মানবের জীবনী। মেলার অন্যতম স্টল নীল আকাশ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আরকে আকাশ বলেন, প্রথম দিনেই বই প্রেমীদের উপচে পড়া ভীড় দেখে আমি আশাবাদী। পাঠশালা স্টলের শিশির ইসলাম জানায়,মেলা প্রাণবন্ত হচ্ছে। মহামারী অবস্থায় এক বছর পর আবার এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। মেলার প্রথম দিনে দেখা যায় শুধু বই কেনা ও বিক্রিই না বসন্তের বিকেলে মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর উৎসবহীন দিন শেষে এই মেলা প্রাণবন্ত করছে সকলকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠিত মেলা পাবনার মানুষের এক মিলনমেলা হয়ে উঠেছে।
শিশুরাও তাদের পছন্দের বই কেনে।বর্তমানে শিশুদের বই পড়া গুরুত্বপ‚র্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। ইন্টারনেট ফেসবুক ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে যাচ্ছে বই পড়ার আনন্দ। পাবনার অসংখ্য শিশুদের কাছে বই পড়ার চেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভার্চুয়াল জগত।ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুরা জাতির ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস,স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য সর্ম্পকে শিশুদের জানতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস করাতে হবে মহামানবদের শৈশব, স্বপ্ন ও তাদের সম্পর্কে জানতে হবে। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, শরৎচন্দ্রে লেখা পড়তে হবে। শিশুদের পাঠের অভ্যাস গঠন, মেধা ও সৃজনশীলতার উম্মেষ এবং মানবিক ম‚ল্যবোধসম্পন্ন আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বই পড়াটা তাদের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।একুশে বই মেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক কমরেড জাকির হোসেন বলেছেন, এই বই মেলাকে ঘিরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলো বই প্রেমীরা। গত ১ মার্চ একুশে বই মেলা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে ১৬ দিন ব্যাপী বই মেলা শুরু হয় । একুশে পদকপ্রাপ্ত পাবনার দুই কৃতি সন্তান সাংবাদিক কলামিস্ট অ্যাডভোকেট রণেশ মৈত্র এবং সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম হাসনায়েন এক সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মেলার উদ্বোধন করেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি। বই মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্পাদক সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, নাগরিক মঞ্চের সভাপতি ইদ্রিস আলী বিশ্বাস, নব নির্বাচিত মেয়র শরীফ উদ্দীন প্রধান, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারুল ইসলাম, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট বেলায়েত আলী বিল্লু, সুলতান আহমেদ বুরো, নাসির চৌধুরী, লেখক আফতাব আলী প্রমুখ।মেলা প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন মেলা শুরু হবে সকাল ১০ টা থেকে।
দেশে শুধুমাত্র ঢাকা ও পাবনা জেলায় দীর্ঘসময় ধরে বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বইপ্রেমীদের ভীড় পরিনত হয় একমিলন মেলায়।
বই পড়ার বিকল্প নেই, বই মেলা শুরু হওয়ায় বই প্রেণীরা উজ্জীবিত সাথে মহামিলন হবে এই প্রত্যাশা বসন্তে যেনো আবার বসন্ত এসেছে।