দিশেহারা শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে মাদকে
সুনান বিন মাহাবুব (পটুয়াখালী):
করোনায় দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মাদকের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর আগে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি কয়েক ধাপে বাড়িয়ে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছিল। সেটি আরও কয়েক দফা বাড়িয়ে ৩০ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। টানা ছুটি এবং ক্যাম্পাস বন্ধের কারনে শিক্ষার্থীরা আসক্ত হচ্ছে মাদক গ্রহনসহ নানা অপকর্মে।
পটুয়াখালী সচেতন নাগরিক কমিটি(সনাক) এর একটি প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, পটুয়াখালী জেলাধীন প্রতিটি উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় দীর্ঘদিন অবস্থানের কারনে অত্র এলাকার বখাটেদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে। ফলে অপরাধের নিরাপদ স্থান এবং সহজলভ্যতার কারনে ইয়াবা, গাজা সেবনের দিকে ঝুঁকছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও পটুয়াখালী শহরের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র লক্ষ করা গেছে। পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সায়েম প্রতিবেদককে জানান, পটুয়াখালীতে মাদকের জোন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটকে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে মাদক কারবারি পরিচালিত করে আসছে প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে থাকা স্থানীয় যুবকরা। বর্তমানে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কলেজের আশেপাশে প্রতিদিন অবস্থান করে মাদক সেবন করছে। অবসর সময় ক্যাম্পাসে কাটানোর পরিবর্তে এখন শিক্ষার্থীরা বহিরাগত যুবকদের সাথে মিশে মাদকে লিপ্ত হচ্ছে।
পটুয়াখালী সরকারী কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েকবার কলেজ খোলার তারিখ দেয়া হলেও কলেজ খোলেনি। বর্তমানে তারা পটুয়াখালী সদরের বিভিন্ন ব্যাচেলর বাসায় রুম ভাড়া করেছেন। কিন্তু কলেজ খোলার কোন নির্দিষ্ট তারিখ না পাওয়ায় এসকল শিক্ষার্থী অনিশ্চিয়তায় ভুগছে। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাচেলর রুমে বহিরাগতদের সহায়তায় ইয়াবা সেবনের নিরাপদ স্থান তৈরি হয়েছে।
শহরের সবুজবাগ, আরামবাগ, কলেজ রোড এর ব্যাচেলর রুম ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যাচেলর রুমে শিক্ষার্থী নেই। তারা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। যারা বর্তমানে রুমে অবস্থান করছে তারাও বহিরাগতদের নিয়ে আড্ডাসহ ধুমপান করছে। তাৎক্ষনিক জিঙ্গেস করলে সবুজবাগের কয়েকটি ব্যাচেলর রুমের শিক্ষার্থীরা জানান, “ক্যাম্পাস বন্ধ, বাড়িতে কতদিন থাকবো? বাড়িতে থাকলেও বাড়ির স্থানীয়রা ডেকে নিয়ে যায় মাদক সেবনের জন্য। ক্যাম্পাস খুললে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতাম সময় কেটে যেত। কিন্তু এখন অস্থিরতার মধ্যে মাঝে মাঝে বাইরের বন্ধু বান্ধব এসে ধুমপানে উৎসাহিত করে।
তবে এ ব্যাপারে অপরাধ এবং মাদকের প্রবনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকে দায়ী করেছেন সুশীল সমাজ। সনাকের সাবেক দলনেতা কে.এম জাহিদ হাসান জানান, করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু ক্যাম্পাসের আনন্দ এবং শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থীদের সময় কাটানোর অভাবে শিক্ষার্থীরা মাদকের দিকে ঝুঁকছে।
পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ আখতার মোর্শেদ বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ তাই নিজ নিজ এলাকায় যে সকল শিক্ষার্থী রয়েছে তারা বহিরাগতদের সাথে সময় না কাটিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দেয়া উচিৎ। পটুয়াখালী সদরের সকল ব্যাচেলর রুমে আমাদের নজরদারি রয়েছে।