South east bank ad

হদিস নেই পাবনা মানসিক হাসপাতালের ৯০ বিঘা জমির

 প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সারাদেশ

হদিস নেই পাবনা মানসিক হাসপাতালের ৯০ বিঘা জমির

রনি ইমরান (পাবনা) :
পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রায় ৩০ একর জমি অবৈধ দখলদারদের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে এমন তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে।
হাসপাতালের জমির পরিমাণ ১৩৩ দশমিক ২৫ একর। আগে এই জমির খাজনা দেয়া হতো। এরমধ্যে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পাশে অবস্থিত পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দেয়া হয়েছে ৩০ একর। বর্তমানে পাবনা মানসিক হাসপাতাল খাজনা দিচ্ছে ৭৪ একর জমির। অবশিষ্ট ২৯ দশমিক ২৫ একর জমি পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের মানসিক রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য ১৯৫৭ সালে ১৩৩ দশমিক ২৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতাল।সাধারণ মানের এই হাসপাতালকে বিশ্বমানের অন্যতম হাসপাতাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেজন্য ইতোমধ্যে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দ্রæত প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং কিছু নির্দেশনা দিয়ে যান। নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো পাবনা মানসিক হাসপাতালের নিখোঁজ হওয়া প্রায় ৯০ বিঘা জায়গা উদ্ধার করা। জায়গা উদ্ধারের নির্দেশনা দিলেও কোন অগ্রগতি নেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা করেছেন পাবনাবাসী। জমি উদ্ধারের দাবি সচেতন মহলের।

পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা থাকায় জমি অধিগ্রহণের কোন ঝামেলা না থাকায় পাবনা মানসিক হাসপাতালকে বিশ্বমানের হাসপাতাল করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। ২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করে জানতে পারে নিখোঁজ প্রায় ৯০ বিঘা জমি। এ জমির উদ্ধার প্রক্রিয়ায় পাবনা মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ধীরগতির ফলে বিশ্বমানের হাসপাতাল করার প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পাবনার সচেতন মহল। পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রিক মো. মকবুল হোসেন (পাশা) জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক মিটিংয়ে জানান মানসিক হাসপাতালের ২৯ একর জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রæত সমাধান করার জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন জমির অবস্থান জানানোর জন্য এসি ল্যান্ডকে দায়িত্ব দিয়েছে।

ডাক্তার মকবুল হোসেন আরও জানান, বিশেষ করে ১৯৫৭ সালের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে পদোন্নতিযোগ্য পদ সৃষ্টি করতে হবে। সাইক্রিয়াট্রিক কোর্স চালু, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ, কমপক্ষে তিন বছর চাকরি আছে এমন পরিচালক নিয়োগ, ব্লক পোস্ট তুলে দেয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান প্রয়োজন।বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও এক্যুমেন আর্কিটেক্টস অ্যান্ড প্লানারস-এর পরিচালক আবু রায়হান রুবেল জানান, ‘আমার জানামতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় পাবনা মানসিক হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল হবে। এটা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা ঠিক হবে না। দায়িত্বশীলদের আরও দ্রæত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।’

পাবনার আধুনিক মানের হাসপাতালটিতে মানসিক রোগী এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। এখানে আধুনিক মানের ওয়ার্ড, রোগী পুনর্বাসন সেন্টার, বৃত্তিম‚লক সেন্টার, মিউজিক্যাল থেরাপি, চিত্রাঙ্কন সেন্টার, হাফওয়ে হাউজ, চাইল্ড সাইকিয়াট্রি, অটিজম সেন্টার, সার্বক্ষণিক জরুরি বিভাগ, অ্যামুজমেন্ট সেন্টার, গার্ডেনিং, সুইমিং, ক্যাটল ফার্মি, সাইকিয়াট্রিক ট্রেনিং সেন্টার, আধুনিক প্যাথলজি বিভাগ, অর্গানোগ্রাম, লন্ড্রি প্ল্যান্ট, আধুনিক স্টোর ভবন, আধুনিক প্রশাসনিক ভবন, বহির্বিভাগ, যানবাহন সুযোগ-সুবিধা, আধুনিক ডরমেটরি, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সেন্টার, সাইকিয়াট্রি বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির জন্য এমফিল, এসসিপিএস, এমডি ইত্যাদি কোর্স চালু, প্লে-গ্রাউন্ড, ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকতে পারে।

পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রোকসানা মিতা জানান, এর আগেও কাজ করছি। মানসিক হাসপাতালের জমি পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে। রেকর্ড পরিবর্তন করতে হবে।এ ব্যাপারে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার আসাদুজ্জামান বলেন, জমির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে সমন্বিত প্রচেষ্টায় জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা হবে।

পাবনা গণপ‚র্ত বিভাগের প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার জানান, আমরা সাধারণত অবকাঠামো সংক্রান্ত কাজ করি। পাবনা মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের হবে সেটা আমরা শুনেছি। তবে জমি নিয়ে সমস্যা আছে সেটা দ্রæত সমাধান করা প্রয়োজন।

জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে মানসিক হাসপাতালের পরিচালক, জেলা প্রশাসন, গণপ‚র্ত বিভাগ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হেমায়েতপুর এলাকার প্রবীণ শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক। জমি কম হওয়ায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববোধের অভাবে বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সচেতন মহল শঙ্কিত।
এ ব্যাপারে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালে ২৯ দশমিক ২৫ একর জমি উদ্ধারের জন্য সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। জমি অন্যান্য মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে আছে সেটা আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সব ধরনের সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে।

BBS cable ad

সারাদেশ এর আরও খবর: