আসছে ক্রেতা, খুশি বিক্রেতা : নেই স্বাস্থ্য বিধি
মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):
মার্কেট খোলা ঘোষণা করার পর থেকে বেশ খুশি বিক্রেতারা। আর মার্কেট খোলার পরপরই অনেক ক্রেতা ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। কিন্তু কোথাও কেউ স্বাস্থ্য বিধি না মেনে গাদাগাদি করেই চলছে ঈদ মার্কেট। রোববার থেকে প্রতিদিনই এমন অবস্থা দেখা গেছে ঝালকাঠি শহরের মার্কেটগুলোতে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকার মার্কেট সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। কিন্তু ঢাকার বাইরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে বেশ খুশি ব্যবসায়ীরা। তারা আশা করছেন এবার ঈদ উপলক্ষে ভালো ব্যবসা হবে, যার মাধ্যমে গতবছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া যাবে। সোমবার ঝালকাঠির কুমারপট্টি, কাপুড়িয়া পট্টি, ফরিয়া পট্টি, তুলাপট্টি, কালী বাড়ি রোড, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়াতে অনেকেই ঈদের পোশাক কেনা শুরু করেছেন। ঝালকাঠি কুমারপট্টি হাজী জয়নাল মার্কেটের তৈরী পোশাক ব্যবসায়ী মনির বলেন, ‘ মার্কেট খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে এতে আমরা খুশি। আশাকরি এখন কিছুটা বিক্রি বাড়বে। গতবছর বিক্রি হয়নি বললেই চলে। তাতে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। এবছরের তা পোষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’ বেচা-কেনা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন তেমন ক্রেতা ছিল না। একপ্রকার দোকান গোছগাছ করেই আমরা সময় পার করে দিয়েছি। তবে দ্বিতীয় দিন থেকে ক্রেতারা মোটামুটি আসছেন। আমাদের ধারণা, গণপরিবহন চলাচল শুরু হলে ক্রেতাও বাড়বে।’
আলমারজান মার্কেটটির ব্যবসায়ী লিটু মোর্শেদ বলেন, ‘মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত খুব ভালো হয়েছে। আমরা আশা করছি এবারের ঈদ উপলক্ষে ভালো বিক্রি হবে। কারণ গতবছর মানুষ কেনাকাটা কম করেছে। এবার বাধ্য হয়েই অনেকে কেনাকাটা করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর আমরা অনেক লোকসান গুনেছি। মাত্র ১৫ দিনের মতো মার্কেট খোলা ছিল। তার ওপর ক্রেতা ছিল না। এবার ভালো বিক্রির আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করেছি। গত বছরের লোকসান পুরোপুরি মেকআপ করা যাবে না। তারপরও আমরা আশা করছি লোকসান কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যাবে।’ খান সুপার মার্কেটর ব্যবসায়ী মো. আরিফ বলেন, ‘প্রথমদিন ক্রেতা খুব কম ছিল। সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকাও বিক্রি হয়নি। তবে দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে কিছু ক্রেতা আসছে। আশা করছি সামনে ক্রেতা আরও বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা এবার ঈদের যেন বিক্রি শুরু হবে ২০ রোজার পর। কারণ এখন বাস বন্ধ। আবার মাস শেষের দিকে। মানুষের হাতে টাকা কম। আগামী মাসে বেতনের টাকা পাওয়ার পর মানুষ মার্কেটে আসবে।’ প্রায় একই ধরনের কথা বলেন ঋতুরাজ শপিং সেন্টারে ব্যবসায়ী তানিম মির্জা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল মার্কেট খোলা রাখার। এখন মার্কেট খোলা রাখার সুযোগ দিয়েছে। এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিকেল ৫টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকলে তূলণামূলকভাবে আমাদের বেঁচাবিক্রি কম হবে। আমাদের তেমন লাভ হবে না, আবার ক্রেতাদেরও দুর্ভোগে পড়তে হবে। রাজধানীর ন্যায় জেলা শহরেও যদি রাত ৯টা পর্যন্ত মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত দেয়া হয় তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই উপকৃত হবেন। তাহলে আমরা আশা করি এবার ভালো বিক্রি হবে। তারপরও কোনো কিছু নিশ্চিত করে বলা যায় না। দেখা যাক সামনে কী হয়।’ মার্কেটটিতে কেনাকাটা করতে আসা সনিয়া আক্তার নামে এক নারী বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা করতেই হবে। পরে এলে মার্কেটে ভিড় বেশি হবে। তাই কিছুটা নিরিবিলি পরিবেশে কেনাকাটা করতে আগে আগেই মার্কেটে চলে আসলাম।’ মার্কেটে সপরিবারে আসা শিল্পী আক্তার বলেন, ‘গত বছর ঈদের কেনাকাটা করতে পারিনি। ছেলে-মেয়ে ঈদের পোশাকের বায়না ধরেছে অনেক আগেই। মার্কেট বন্ধ থাকায় আসতে পারিনি। এখন মার্কেট খুলে দিয়েছে তাই সবাই মিলে চলে এলাম। প্রয়োজন হলে ঈদের আগে আবার আসব।’ ক্রেতা নিপা, মিতু, জুয়েনা, মনি বলেন, ‘অনেকদিন পর মার্কেট খুলেছে। মার্কেটে নতুন কী এসেছে তা দেখার জন্য এসেছি। কিছু পছন্দ হলে কিনব। না হলে কয়েকদিন পর এসে কিনবে। মূলত এসেছি মার্কেটের অবস্থা দেখার জন্য।’