South east bank ad

পরিবারে সদস্য ৫জন, একমাসের জন্য শুধু চাল পেয়েছি ৪০কেজি, আনুসাঙ্গিক পাবো কোথায়?

 প্রকাশ: ০৪ মে ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সারাদেশ

পরিবারে সদস্য ৫জন, একমাসের জন্য শুধু চাল পেয়েছি ৪০কেজি, আনুসাঙ্গিক পাবো কোথায়?

মোঃ রাজু খান (ঝালকাঠি):

আমাদের পরিবারটি ৫সদস্যের। ৩সন্তান নিয়ে আমরা দুজনে বসবাস করছি। নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে বিক্রি করেই চলে আমাদের জীবন জীবীকা। সন্তানদের মুখে দু’বেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পারছি। এহোন (এখন) ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে। নদীতে নামলেই স্যারেরা জাল ধরে নিয়ে যায়। আমরা অশিক্ষিত মানুষ, কখন ভালো আর কখন মন্ধ তাও জানি না। এহোন অনেকদিন পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলা নিষেধ। আগামী ১মাসের জন্য শুধু ৪০ কেজি চাল পেয়েছি। ৫জন মানুষের জন্য প্রতিদিনই লাগে ২কেজি চালের ভাত। তাহলে অন্যান্য আনুসাঙ্গিক উপাদান তেল, মসলা ও তরকারি পাবো কোথায়? এমনটিই ক্ষোভের কথা জানালেন ঝালকাঠি জেলে পাড়ার বাসিন্দা উত্তম মালো। শুধু তিনিই না, ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত জেলে পাড়ার বাসিন্দাদের সবারই কমবেশি এমন অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, জেলেরা বেশিরভাগই অশিক্ষিত। তাই তারা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি মানে না। যে সংসারে সন্তান কম আছে সে সংসারে কম হলেও ৩জন সন্তান আছে। অনেক সংসারে তো ৪/৫জন করেও আছে। প্রতিমাসে সরকারী সহায়তায় প্রতি জেলের কার্ডের বিপরীতে ৪০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। গড় হিসেবে ৬/৭জনের মৎস্যজীবী পরিবারের জন্য প্রতিদিন যেখানে ২কেজির উপরে চাল রান্না করতে হয়, সেখানে ৪০কেজি চাল দিয়ে কিভাবে মাস পার করা সম্ভব হবে। তাও আবার শুধু চাল, কোন আনুসাঙ্গিক ডাল, তেল, মসলা, লবণ, তরকারী কোন কিছুই নেই। তাহলে কিভাবে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে। একারণে অনেকেই পেশা বদল করে অন্য পেশা বা বৃত্তিতে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ঝালকাঠি জেলায় প্রকৃত পেশাদার জেলেদের সংখ্যার চেয়ে সহায়তার জন্য বরাদ্দ অনেক কম। তারপর আবার দিচ্ছে ৪০কেজি করে শুধু চাল। তাহলে অন্যান্য তেল, মসলা ও তরকারি পাবো কোথায়? শুধু চালে কি পেট ভরে? এমন প্রশ্ন এখন ঝালকাঠি জেলার প্রায় সাড়ে ৬হাজার জেলের মুখে। জেলেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাটকা ধরা নিষিদ্ধ কিন্তু ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ না থাকলেও নদীতে জাল ফেললেই কয়েক রকমের অভিযান এসে আমাদের কাছ থেকে জাল নিয়ে যায়। জাটকা ধরি না বড় ইলিশ ধরি তা তারা দেখেন না। সরকার ভিজিডি চালের সহায়তার পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়িয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যও যদি সহায়তা দিতো তাহলে আমাদের আর দুঃখ থাকতো না। উল্লেখ্য, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির নীচে সকল ধরনের ইলিশ, জাটকা ও চাপিলা আহরণ, মজুদ ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এসময় জেলেদের এ সহায়তা প্রদান করা হয়। ঝালকাঠি জেলায় জেলে রয়েছেন সাড়ে ৬হাজার জন। এর মধ্যে চাল সহায়তা পান মাত্র ৩হাজার ২০০ জন। যা জেলেদের সংখ্যার অর্ধেকেরও কম। জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলার ৪ উপজেলায় জেলে রয়েছেন সাড়ে ৬হাজার জন। এদের মধ্যে ভিজিডির চাল ৪০কেজি করে প্রতিমাসে দেয়া হচ্ছে ৩হাজার ২০০ জনকে। ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৫শ ৮১ জন জেলেকে ৪৬.৪৮ মেট্রিকটন, নলছিটি উপজেলায় ৭শ ৯৭ জন জেলেকে ৬৩.৭৬মেট্রিকটন, রাজাপুর উপজেলায় ৮শ ৯৩ জন জেলেকে ৭১.৪৪ মেট্রিকটন ও কাঠালিয়া উপজেলায় ৯শ ২৯জন জেলেকে ৭৪.৩২ মেট্রিকটন ভিজিডির চাল সহায়তা পাচ্ছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ঝালকাঠিতে কিছুদিন হলো যোগদান করেছি। প্রকৃত জেলেদের জন্য কিছু যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। অপেশাদার কিছু জেলেকে বাদ দিয়ে নতুন করে কিছু পেশাদার জেলেকে কার্ড দেয়া হয়েছে। হালনাগাদ অনেকে তালিকায় আছেন কিন্তু এখনও কার্ড পায়নি। পর্যায়ক্রমে তাদের জন্য সহায়তা আসবে। ভিজিডি চাল সহায়তায় আরো জেলেদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেখান থেকে বরাদ্দ পেলে আমরা দিতে পারবো।

BBS cable ad

সারাদেশ এর আরও খবর: