প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ : যারা টাকা ফেরত দিতে পারবেন, তাদের ঋণ দিন
ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এর আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি ব্যাংকগুলোকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা যাকে-তাকে ঋণ দিতে বলছি না। যারা টাকা ফেরত দিতে পারবেন, তাদের ঋণ দিন। এই লক্ষ্যে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এফবিসিসিআইর সমন্বয়ে দু-এক দিনের মধ্যে কমিটি গঠিত হচ্ছে। এই কমিটি ঋণ সহায়তা বাস্তবায়ন করবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী ২০২১ ও ২০৪১ ভিশন এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আলোকে প্রণীত ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে কভিড-১৯-এর বাস্তবতা প্রতিফলিত হবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় সরকার কয়েক কোটি মানুষকে খাদ্য সহযোগিতা, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের আর্থিক সহযোগিতায় ৭০০ কোটি, প্রবাসী কর্মীদের জন্য ২০০ কোটি, এসএমই শিল্পের ২০ হাজার কোটি, বৃহৎ শিল্পে ৩০ হাজার কোটি, রপ্তানি শিল্পে ৫ হাজার কোটি, কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ থাকবে বলে আমরা আশা করি।’ তিনি বলেন, ‘করোনা সংকট উত্তরণে সহায়তা নিয়ে সারা দেশের সব স্তরের ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার উদ্যোগ নিয়েছে এফবিসিসিআই। জানি না আমরা কতটুকু পারব। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে থাকব। এই লক্ষ্যে এফবিসিসিআই থেকে অনেকগুলো খাতভিত্তিক কাউন্সিল গঠন করেছি। সব জেলাপর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সাব-কমিটি গঠন করতে চেম্বারগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সাব-কমিটি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করবে। ফলে একেবারে যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া সম্ভব হবে না, তাদের ঋণ দেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিতে এফবিসিসিআই থেকে হেল্প ডেস্ক গঠন করা হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীদের ঋণের জন্য আবেদন করতে বলেছি। জেলা চেম্বারগুলোকেও হেল্প ডেস্ক তৈরি করতে বলেছি। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের অনলাইনে বিভিন্ন পরামর্শ সহায়তা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমাদের অংশীজনরা ভার্চুয়াল সুবিধা যেমন পাবেন, তেমনি ফোনেও সহায়তা দেওয়া হবে। প্রকৃত অর্থে সব ব্যবসায়ীর পাশে থাকার চেষ্টা করছে এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের এই শীর্ষ নেতা আসছে বাজেট সামনে রেখে সরকারকে কিছু প্রস্তাবনা বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ঋণ প্রথম পর্যায়ের সহায়তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ এবং রপ্তানি বাণিজ্য ৩০ শতাংশ কমে যাওয়া এবং ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় পর্যায়ে আগামী দুই বছরের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা-এসএমই খাতকে কর, ভ্যাট সুবিধা ও অনুদান সংবলিত বাজেটারি সহায়তা দেওয়া হোক। এক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নির্ধারণ এবং সমন্বয়যোগ্য করা হোক। শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর (এটি) প্রত্যাহার এবং অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনো রকম বিলম্ব ছাড়াই সমন্বয়যোগ্য করতে হবে। ফেরতযোগ্য বা রিবেটেবল ভ্যাট সংশোধন করে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য একাধিক করহারসমূহ (মাল্টিপল রেট) এর প্রয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হোক। বার্ষিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকার ক্ষেত্রে ভ্যাট ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক।’