দেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট সম্পন্ন
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা যান্ত্রিকভাবে হৃদপিণ্ডের কাজ প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মূলত এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা হলো। শনিবার ইউনাইটেড হসপিটালের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা যায়।
ইউনাইটেড হসপিটালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির গত বুধবার ইউনাইটেড হসপিটালে ৪২ বছরের এক নারীর হৃদপিণ্ডে মেকানিক্যাল হার্ট বা লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস (এল্ভ্যাড) স্থাপন করেন। যিনি দীর্ঘদিন শেষ পর্যায়ের বা তীব্র হার্ট ফেইলিওর নামক হৃদপিণ্ডের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন এবং দেশে বিদেশে নানা চিকিৎসার পরও তার হৃদপিণ্ড বা হার্ট প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ছিলো।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান উৎকর্ষতায় উন্নত বিশ্বে এর একমাত্র চিকিৎসা আরেকটি সুস্থ হার্ট দিয়ে প্রায় অকার্যকর হার্টটি প্রতিস্থাপন। তবে যদি সুস্থ হার্ট না পাওয়া যায় কিংবা পেতে দেরি হচ্ছে এবং হার্টের অবস্থা যদি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে তবে মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট এল্ভ্যাড স্থাপন করা হয়। এতে রোগীর হার্ট কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং সমস্ত শরীরের রক্ত চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ফলে শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার ইত্যাদি সেরে ওঠার সুযোগ পায়। তীব্র হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত কিছু রোগী হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের উপযুক্ত না হলে তাদের জন্য একমাত্র বিকল্প LVAD (এল্ভ্যাড), যা স্থাপনের মাধ্যমে বাকি জীবন সুস্থভাবে অতিবাহিত করতে পারেন।
ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার দক্ষ সহকর্মীরা প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় ধরে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে Heartmate-3 নামের একটি মেকানিক্যাল হার্ট রোগীর হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করেন এবং তার পুরো হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন। আশা করা যাচ্ছে এর মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসবে এবং হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণ সমূহের উন্নতি ঘটবে।
বাংলাদেশে হার্ট সার্জারির প্রথম সারির এ চিকিৎসক দল ইউনাইটেড হসপিটালের শুরু থেকেই পনের হাজারেরও বেশি মানুষের হার্টের সফল সার্জারি করেছেন এবং রোগী ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ ও হার্ট অ্যাটাক, কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ, হার্ট ভাল্ভজনিত সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘমেয়াদি হার্টের অস্বাভাবিক রিদম বা অ্যারেদমিয়া ইত্যাদি নানান রোগের শেষ পরিণতি হচ্ছে ‘হার্ট ফেইলিওর’।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ১ কোটির বেশি মানুষ এই জটিল রোগে আক্রান্ত। এশিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ১ দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।