নারীদের পেশাদার জীবনে উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে অনন্য ব্র্যাক ব্যাংক

ব্র্যাক ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে নারীরা খুঁজে পান তাঁদের অপার সম্ভাবনা বিকাশের দুর্বার এক মঞ্চ। এটি কেবল একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানই নয়; বরং এটি এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে নেতৃত্ব, উদ্ভাবন এবং সাফল্যের শিখরে পৌঁছোতে নারীদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়ন করা হয়।
জেন্ডার-সমতা, নেতৃত্বের বিকাশ এবং সহকর্মীদের
কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক প্রচলিত সীমাবদ্ধতাগুলো ভেঙে নারীদের
জন্য ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। ভবিষ্যতের ব্যাংকিংকে নতুন রূপ দিতে
এবং এই খাতে থাকা প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে এখানে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তন
নিয়ে আসতে নারীদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক।
নারীদের ক্যারিয়ার অগ্রগতিতে সহায়তার
লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। নেতৃত্বের বিকাশ, দক্ষতা উন্নয়ন
এবং কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাংকটি নারীদের এমনভাবে গড়ে
তুলছে, যাতে নারীরা ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে নিজেদের উচ্চপদে আসীন করার পাশাপাশি
আর্থিক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন।
জেন্ডার-ইক্লুশনের বেঞ্চমার্ক হিসেবে
দেশে ব্র্যাক ব্যাংকই সর্বপ্রথম কেবল নারীদের দ্বারা পরিচালিত ব্রাঞ্চ চালু করেছে,
যেখানে নারী ব্যাংক কর্মীরা গ্রাহকসেবা থেকে শুরু করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পর্যন্ত
প্রতিটি স্তরের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এই উদ্যোগ নারীদের প্রতি ব্যাংকের আস্থার
প্রতিফলন এবং জেন্ডার-বৈচিত্র্য বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পূরণের নিদর্শন।
এছাড়াও, ব্যাংকটি শুধু নারীদের নিয়ে
একটি সেলস টিম গঠন করেছে, যাঁরা নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং সেবা দিয়ে থাকেন।
এই টিমে বর্তমানে ২৬ জন নারী রয়েছেন এবং ব্যাংকটির লক্ষ্য হলো এই সংখ্যাটি ৫০০-তে
নিয়ে যাওয়া। এমন উদ্যোগ প্রচলিত ধারা ভেঙে দিয়ে সেলস ফোর্সে নারীদের সামনের কাতারে
নিয়ে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানের নারী সহকর্মীদের জন্য ব্র্যাক
ব্যাংক ২০১৬ সালে চালু করে ‘তারা ফোরাম’, যা বর্তমানে বাংলাদেশের
বেসরকারি খাতে নারী ব্যাংকারদের সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক। ‘তারা ফোরাম’ নারীদের বিভিন্ন পরামর্শ, ক্যারিয়ার নির্দেশনা এবং কর্মক্ষেত্রে মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার
দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তার করার পাশাপাশি পেশাদার
জীবনে এগিয়ে যেতেও সহায়তা করে থাকে।
আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে তোলার
লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক চালু করেছে ইলিয়া (ELEA- Enlightened Leaders
Exemplify Achievement)। এটি একটি কাঠামোগত নেতৃত্ব-সৃষ্টিকারী
কর্মসূচি, যা আগামীর ব্যাংকিং খাতে আরো বেশি নারীদের উচ্চপদে নিয়ে যেতে সহায়তা
করবে বলে ব্যাংকটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। সিনিয়র
ম্যানেজমেন্টে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, ব্যাংকিং খাত সম্পর্কিত জ্ঞান
এবং কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে নারীদের সহায়তা করার লক্ষ্য নিয়েই এটি চালু করা
হয়েছে।
নারীদের সাফল্য উদ্যাপনের লক্ষ্য নিয়ে
ব্র্যাক ব্যাংক ‘উইমেন ওয়ারিয়র্স’ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় তিন মাস পর পর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফ্রন্টলাইন নারী সহকর্মীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। এর
ফলে ‘যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বীকৃতি’র সংস্কৃতিও আরো
সুদৃঢ় হচ্ছে।
একটি ভারসাম্যপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত
করতে ব্র্যাক ব্যাংক বিভিন্ন ‘ওয়েলনেস’ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে
ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণের সুবিধাসহ ইয়োগা সেশন, নারী সহকর্মীদের জন্য পৃথক সময়সূচিসহ একটি সুসজ্জিত জিম এবং আলাদা নামাজঘর। এছাড়াও, ব্যাংকটিতে রয়েছে রিডিং
ক্যাফে, মিউজিক ক্লাব, ক্রীড়া টুর্নামেন্ট এবং ‘দৌড়’-এর মতো মিনি-ম্যারাথন, যা
শুধু বিনোদনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সুস্থতাতেও অবদান রাখছে।
১০ হাজারেরও বেশি কর্মী রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকে,
যা জেন্ডার-বৈচিত্র্যের প্রতিশ্রুতিরও প্রতিফলন। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে
দায়িত্ব পালন করছেন তিনজন নারী। এছাড়াও, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে প্রথম নারী চিফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকে, যা নিয়ে
ব্যাংকটি গর্বিত।
কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও বৈষম্যের
বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংক জিরো-টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। সহকর্মীরা যাতে সেক্সুয়াল
হ্যারাসমেন্ট অ্যান্ড এলিমিনেশন (SHE- Sexual Harassment and Elimination) পলিসি,
নিজেদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক দিকনির্দেশনা এবং ‘স্পিক-আপ’ পলিসি সম্পর্কে
পরিপূর্ণ ধারণা রাখতে পারেন, সেজন্য ব্যাংকটিতে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম
পরিচালনা করা হয়।
কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য
রক্ষায় ব্র্যাক ব্যাংক নারী সহকর্মীদের পরিবহন সেবা দেয়, যা তাঁদের দৈনন্দিন
যাতায়াতকে সহজ করে। এছাড়াও, ব্যাংকিং খাতে প্রথমবারের মতো সর্বাধুনিক
সুবিধাসম্পন্ন একটি ডে-কেয়ার সেন্টারও স্থাপন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক, যা বিনামূল্যে
নারী সহকর্মীদের বাচ্চাদের দেখাশোনার সুবিধা প্রদান করে। এখানে একজন নারী ছয়
মাসের পূর্ণ বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির সুবিধাও উপভোগ করেন।
বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংকের মোট কর্মীর
মধ্যে ১৫% নারী এবং ২০২৭ সালের মধ্যে এই হার ২৫%-এ উন্নীত করার সাহসী লক্ষ্য
নির্ধারণ করেছে ব্যাংকটি। জেন্ডার-ইনক্লুশন, নেতৃত্বের
বিকাশ ও সহকর্মীদের সুযোগ-সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্র্যাক
ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নারীদের জন্য অন্যতম প্রধান নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান
হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। সামনের দিনগুলোতেও ব্র্যাক ব্যাংক এমন সব
উদ্যোগ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি অন্য
প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।