পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিশেষ তহবিলের নীতিমালা শিথিল চায় ব্যাংকগুলো

পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রতিটির জন্য ২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করে সরকার। একটি নীতিমালার অধীনে বিশেষ এ তহবিলের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে ব্যাংকগুলো। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ তহবিলের মেয়াদ আরো বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ নীতিমালা কিছুটা শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে ব্যাংকগুলো। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বণিক বার্তাকে জানান, গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এখানে কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে বিএসইসি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য গঠিত ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের মেয়াদ আরো বাড়ানোর বিষয়েও এ সময় আলোচনা হয়েছে। এরই মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ বিশেষ তহবিলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরো বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষ তহবিলে বিনিয়োগের নীতিমালা অনুসারে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মোট ইউনিটের ১০ শতাংশ ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মোট ইউনিটের ১৫ শতাংশের বেশি কেনা যাবে না এমন শর্ত রয়েছে। তাছাড়া যেসব মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড তিন বছর ধরে টানা ন্যূনতম ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে, যেসব বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) অভিহিত মূল্যের বেশি রয়েছে এবং গত তিন বছর ন্যূনতম ৫ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে এমন ফান্ডেই বিনিয়োগ করতে পারে ব্যাংকগুলো। বৈঠকে এসব শর্ত শিথিল করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজারে ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ উৎসাহিত করে বিশেষ তহবিলের বিনিয়োগ নীতিমালার শর্তগুলো শিথিল করে পুরো প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করার বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সভায় দেশের ভালো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের উন্নয়ন ও বিকাশে উদ্যোগ গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ তহবিলের মেয়াদ আরো বাড়ানোর পাশাপাশি এ তহবিলে বিনিয়োগের নীতিমালা শিথিল করার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ব্যাংকগুলোর কাছে লিখিত প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। সেগুলো পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরো আলাপ-আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব এবং সোনালী ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ব্যাংক এশিয়া ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।