শিরোনাম

South east bank ad

বিক্রি হয় না সরকারি চিনি

 প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ক্রয়-বিক্রয়

বিক্রি হয় না সরকারি চিনি
দেশের ১৫ সরকারি চিনিকলের গুদামে এখন ১ লাখ ৩৬ হাজার টন আখের চিনি পড়ে আছে। এর মধ্যে চার বছর আগে উৎপাদিত চিনিও আছে। এই চিনি খাওয়ারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একদিকে চিনির মান খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে বিক্রি হচ্ছে যৎসামান্য। এতে বিপাকে সরকারি চিনিকলগুলো। বকেয়া পড়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের দুই-তিন মাসের বেতন। কোনো কোনো চিনিকলে বেতনের বদলে শ্রমিকদের চিনিও দেওয়া হয়েছে। সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। তাঁরা এখন ঠিকমতো কাজ করতে চান না। মাঝখানে শ্রমিকেরা বেতনের বদলে চিনি নিয়ে গেছেন। কম দামে তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন।’ এখন কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেসব শ্রমিক চাইছেন, তাঁদের আমরা এখনো চিনি দিচ্ছি।’ সরকারি চিনিকলগুলো পরিচালনা করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। সংস্থাটির কাছ থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চিনিকলগুলোতে এখন ১ লাখ ৩৬ হাজার টন চিনি পড়ে আছে। এসব চিনি উৎপাদন করতে প্রতি কেজিতে খরচ হয়েছে ৭৭-৮০ টাকা। সেই হিসাবমতে, এই চিনির পেছনে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তবে সরকারি চিনির এখন বিক্রয়মূল্য ৩৭ টাকা। মজুত পড়ে থাকা চিনির বাজারমূল্য তাই ৫০৩ কোটি টাকা। কেন এই চিনি বিক্রি হচ্ছে না, জানতে চাইলে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কে এম দেলোয়ার হোসেন  বলেন, ‘আমার চিনির দাম ৩৭ টাকা। কিন্তু বেসরকারি মিলগুলো চিনি বিক্রি করছে ৩২-৩৩ টাকায়। আমার চিনি বিক্রি হবে কীভাবে? দাম কমিয়ে, শুল্ক বাড়িয়েও চিনির বিক্রি বাড়ানো যাচ্ছে না। অথচ আমার চিনি বাজারে আমদানি করা চিনির চেয়ে অনেক ভালো।’ করপোরেশনের চিনি বিক্রির এই করুণ হাল চার বছর ধরেই। চিনির বিক্রি বাড়াতে না পেরে চার বছরে দাম কমানো হয়েছে পাঁচবার। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবার যখন দাম কমানো হয়, তখন প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৬০ টাকা। সেই চিনির দাম নেমে এসেছে ৩৭ টাকায়। কিন্তু যখনই চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন দাম কমায়, তার চেয়েও দু-তিন টাকা কমে বাজারে চিনি বিক্রি করে বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারীরা। বেশি দামে চিনি তুলে তা বিক্রি করতে পারেন না বলে ডিলাররা সরকারি চিনি কিনছেন না। সরকারি চিনি যেটুকু বিক্রি হয়, তার বেশির ভাগই নেয় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চিনি: বিএসএফআইসি সূত্র বলছে, সরকারি চিনিকলগুলোতে তিন-চার বছর আগের (২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ আখমাড়াই মৌসুমের) চিনি আছে প্রায় ১৫ হাজার টন। এসব চিনি বেশ লালচে হয়ে গেছে, একটি অংশ খাওয়ার প্রায় অনুপযোগী। করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, উৎপাদিত চিনির মান ১২ থেকে ১৫ মাস ভালো থাকে। গুদামে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে চিনি দুই বছর পর্যন্ত ভালো রাখা সম্ভব। ওই দুই মৌসুমে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় ছিল ৭৭-৮০ টাকা। সে হিসাবমতে, ওই চিনি উৎপাদনে চিনিকলগুলোর ব্যয় হয় ১১৫-১২০ কোটি টাকা। আর এর বর্তমান বাজারমূল্য ৫৫ কোটি টাকা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কেরু অ্যান্ড কোং বিডি লিমিটেডের। এই চিনিকলে সবচেয়ে বেশি চিনি জমেছে, ১৭ হাজার ৭৭৫ টন। আছে চার বছর আগের চিনিও। কী অবস্থা ওই চিনির, জানতে চাইলে চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম আরশাদ হোসেন  বলেন, ২০১১-১২ আর ২০১২-১৩ মৌসুমের চিনিগুলো একদমই লালচে হয়ে গেছে। কিন্তু গলে যায়নি। এই চিনিটা কেউ কিনতেও চাচ্ছে না। নতুন চিনিই কিছু পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে। ওই দুই বছরের প্রায় আট হাজার টন চিনি এখনো পড়ে আছে বলে জানান তিনি। সেতাবগঞ্জ চিনিকলেও চার বছরের চিনি জমেছে। এর মধ্যে ২০১১-১২ মৌসুমের চিনি আছে ২ হাজার ৫১১ টন। এই চিনি একেবারেই লালচে হয়ে গেছে। কেউ কিনতেও চাইছে না। চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করা না হলে এই চিনি বিক্রি করা সম্ভব নয়। বিষয়টি আমরা চিঠি দিয়ে প্রধান কার্যালয়ে জানিয়েছি।’ নর্থ বেঙ্গল চিনিকল অতটা খারাপ অবস্থায় নেই বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে কেরুর পর সবচেয়ে বেশি চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে এই চিনিকলেই, ১৭ হাজার ৩০২ টন। এখানে আছে তিন বছরের চিনি। ২০১২-১৩ মৌসুমের চিনি এরই মধ্যে লালচে হয়ে গেছে। চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবদুল আজিজ  বলেন, তিন বছর আগের চিনিটা লালচে হয়ে গেছে। কিন্তু খাদ্যমূল্য এখনো আছে। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের চিনিটা লালচে হয়েছে। কিন্তু এখনো খাওয়ার উপযোগী আছে। এই চিনির কোনো সমস্যা নেই।’ শুল্ক বাড়িয়েও বাড়েনি বিক্রি: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ২৬ আগস্ট অপরিশোধিত, পরিশোধিত সব ধরনের চিনির ওপর ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করে। সরকারি চিনির বিক্রি বাড়ানোই এর কারণ বলে জানা যায়। কিন্তু শুল্ক বাড়িয়েও সরকারি চিনির বিক্রি বাড়েনি। করপোরেশন বলছে, গত এক মাসে মাত্র ৩ হাজার ৭০০ টন চিনি বিক্রি হয়েছে। এ কে এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, চিনি আমদানির ওপর আরও শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিচ্ছেন তাঁরা। গত রোজার ঈদ সামনে রেখে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন প্রথমবারের মতো প্যাকেটজাত করে আখের চিনি বিক্রি শুরু করে। আড়াই মাসে এই চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৬০ টন। কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিক্রির পরিমাণ হয়তো বেশি নয়। তবে প্যাকেটজাত চিনিটা বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই চিনি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। দেশে চিনির চাহিদা বছরে ১৫-১৬ লাখ টন। বেসরকারি ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন ক্ষমতা ৩৩ লাখ টন। আর সরকারি চিনিকলে বছরে উৎপাদন হয় এক লাখ টনেরও কম চিনি।
BBS cable ad

ক্রয়-বিক্রয় এর আরও খবর: