নৈতিকতার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে গেছি : সিইসি
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, নীতি-নৈতিককতার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। সংস্কৃতি-কৃষ্টি গঠিত হয় নৈতিক মূল্যবোধ দিয়ে। এ জিনিসটি আমাদের চর্চা করতে হবে। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধগুলো কেবল নির্বাচন বিষয়ক নয়। সব ক্ষেত্রে সততা, বিনয়, মূল্যবোধ যেগুলো ক্ষয়ে গেছে, সেগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে স্থানীয় পর্যবক্ষেকদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে কূটকৌশল কেউ করতে পারবেন না। সেটা টলারেট করা হবে না। আমার এবং আমার সহকর্মীদের এতটুকু সাহস রয়েছে। ভোটারদের সচেতন করতে হবে। আমার ভোট আমি দেব, এমন উদ্ভাবনী বাক্য দিয়ে ভোটারদের সচেতন করতে পারি। পর্যবেক্ষকদেরও ভোটারদের সচেতন করার ভূমিকা রাখতে হবে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে। অনেকেই হাফ হলেও ব্যবহার করতে বলেছেন। আমরা এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি আমাদের জন্য খুব সুবিধাজনক। সহিংসতার কথা যা বলা হচ্ছে, সেই রূপটা ধারণ করে ভোটের দিন। কেন্দ্রে যে সহিংসতা হয়, তা নিয়ন্ত্রণ অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, ইভিএম মেশিন যেটা আমি নিজেও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখেছি, এটি ব্যবহারের সমর্থন যদি পাই, সন্দেহ দূরীভূত করতে পারি, তাহলে এটার একটা যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ ব্যবহার করে নির্বাচনকে অহিংস করে তুলতে পারি। ওখানে আমি গিয়ে ১০টা ভোট দিতে পারবো না কোনোভাবেই। ছিনতাই করেও ওটা দিতে পারব না। কারণ আইডেন্টিফাই হতে হবে, বায়োমেট্রিক দিতে হবে। বায়োমেট্রিক দিতে না পারলেও ওখানে একটা উপায় বিধিমালায় আছে। সবকিছুরই নেতিবাচক, ইতিবাচক দিক আছে।
সিইসি বলেন, ব্ল্যাক আউটের কথা বলা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট নির্বাচনের সময় কেন করা হয়, কী কারণে করা হয়। নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্যই যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয়, আমরা নির্বাচনকেই ব্ল্যাকআউট করে দিতে পারি। স্পষ্ট করে বলতে চাচ্ছি-নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো কূটকৌশল কেউ করতে পারবেন না। যদি নির্বাচনকে আড়াল করার জন্য কেউ ব্ল্যাক আউট করেন, তবে আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য থাকবে, সেটা টলারেট করা হবে না। আমার এবং আমার সহকর্মীদের অতটুকু সাহস রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গত মার্চ মাস থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংলাপ করছে। গত ১৩ ও ২২ মার্চ এবং ৬ ও ১৮ এপ্রিল যথাক্রমে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজ এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিকদের সংলাপ করেছে ইসি। নিবন্ধিত ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ৩২টি আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। যার মধ্যে ২০ জন পর্যবেক্ষক সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোটার ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে না। ভোটার ছলনার শিকার হয়। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ভুইয়া বলেন, ইভিএমের ভেতরে জিনের উপস্থিতি আছে। সেই জিন দূর করতে হবে৷
মুভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক বলেন, বিগত কয়েক নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার কারণে নতুন ভোটারদের মধ্যে অনীহা ও ভীতি জন্মেছে। তাই নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহী করতে দেশব্যাপী ভোটার উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
লুৎফুর রহমান ভুইয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া বলেন, ভোটের আগের দিনে যদি ভোট হয়ে যায়, তাহলে তো জনগণ আস্থা পাবে না৷ এক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হবে।
ইলেকশন স্পেশালিস্ট আব্দুল আলীম বলেন, ভোটে সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলে বিদেশি অনেক পর্যবেক্ষক সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণে আসে না। প্রার্থীদের সামনে ইভিএম কাস্টমাইজেশন দেখানোর উদ্যোগ বেশ ভালো। এটার সিকিউরিটি অ্যানালাইসিস করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এছাড়া ইভিএমের সোর্স কোড উন্মুক্ত করতে হবে। এছাড়া ইভিএমে আস্থা ফেরাতে হ্যাকিং কম্পিটিশন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে।
ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, আপনাদের কাজটা অনেক কঠিন৷ ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে ভোটে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে।
জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, পর্যবেক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। তাদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।