এলডিসি-পরবর্তী সময়ে দেশের রফতানি শিল্পকে বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে : ডিসিসিআই
এলডিসি-পরবর্তী সময়ে দেশের রফতানি শিল্পকে বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। পণ্যের গুণগত মান, মূল্য ও ভোক্তার আচরণে পরিবর্তন আসবে। এমন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণা ও উদ্ভাবনের পাশাপাশি রফতানি সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য পোশাক খাতসহ পাট, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা, ওষুধ, হালকা প্রকৌশল ও আইসিটির মতো সম্ভাবনাময় খাতকে সমান সুযোগ দিতে হবে। সম্ভাব্য রফতানিমুখী শিল্প ও সম্ভাবনাময় খাতের চ্যালেঞ্জ শনাক্ত ও উত্তরণ কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত গতকালের এক ভার্চুয়াল সংলাপ থেকে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে রফতানি বহুমুখীকরণে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক এ সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএইচএম আহসান।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইআইওএ) সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।
সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এএইচএম আহসান বলেন, আমাদের রফতানি পণ্যের বাজার মূলত ইউরোপ ও আমেরিকাভিত্তিক। তবে সময় এসেছে বর্তমান বাজারের বাইরে বিশেষ করে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগী হওয়ার। পণ্যের পাশাপাশি সার্ভিস বা সেবা রফতানির বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করাকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় অন্যান্য রফতানিমুখী খাতে বন্ডসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সাল-পরবর্তী সময়ে অনেক রফতানি বাণিজ্য ও স্বল্প ব্যয়ে ঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। পাশাপাশি নানা ধরনের শুল্ক-অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হতে হবে।
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের এ অর্জন বিভিন্ন সূচকে আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নের একটি স্বীকৃতি। তবে এর ফলে অর্থনীতির কোথায়, কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তার জন্য আমাদের হোমওয়ার্ক করতে হবে। আমাদের দেশীয় আইন ও নীতিমালাগুলোকে ডব্লিউটিও সুপারিশের আলোকে সংশোধন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন খুবই জরুরি।
সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ স্মারক স্বাক্ষরে আরো গতি আনার ওপর জোরারোপ করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি জানান, এর মাধ্যমে রফতানি বাড়বে। তবে এ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানির ক্ষেত্রে তথ্যগত গরমিল থাকে বলে সংলাপে তুলে ধরেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানির যেসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবি থেকে দেয়া হয়, সেখানে বেশকিছু গরমিল রয়েছে। যে কারণে এ খাতে বিদেশ থেকে টাকা আনতে নীতিগত প্রতিবন্ধকতা বেশ প্রকট।
সংলাপে অন্যদের মধ্যে আরো অংশ নেন সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালের জেনারেল ম্যানেজার নাইমুল হুদা এবং এসিআই মবিলিটি, প্লাস্টিক অ্যান্ড এগ্রিবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. এফএইচ আনসারী।