বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের এক অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল: শিবলী রুবাইয়াত
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের এক অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এখানে লাভ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রচুর সম্ভাবনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে দেখতে পারবো।
গতকাল সোমবার ২৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে অর্থনীতি বিষয়ক রোড শো। ১০দিন ব্যাপি এ রোড শোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হবে। রোড শোর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এসব কথা বলেন। ১০দিনের এই রোড শোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেইজ অব বেঙ্গল টাইগার’।
সবাইকে বাংলাদেশের উন্নয়নে সঙ্গী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান অর্থনীতির উন্নতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। গত বছর জিডিপিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভিয়েতনামসহ আরও অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে। আমাদের গড় জিডিপি গ্রোথ গত এক দশকে ৬.৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত ১২ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কিছুতেই অসাধারণ উন্নতি করেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার হারও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অপরদিকে শিক্ষিত ও আধাশিক্ষিত শ্রমশক্তি রয়েছে আমাদের, যারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, নেটওয়ার্কিংসহ আরও অনেক কিছুতেই।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য উৎপাদনে খরচ অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে। এদিকে বাংলাদেশের অধিকাংশ যুবক ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে খুবই পরিচিত এবং সচেতন। তাদের এসব সক্ষমতা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তপক্ষের (বিডা) পক্ষ থেকে আমরা ভালো সাড়া পাওয়ায় ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে আরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এসময় জানানো হয়, এফডিআইতে সরকার অনেক ধরনের সুবিধা দিচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। গত ১০ বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হাইটেক পার্কে ২২ শতাংশ ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এছাড়াও হাইটেক পার্কে তাদের ৮০ শতাংশ ভ্যাট ইউটিলিটি থেকে অভ্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ইক্যুইটি সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রথম বছর ৫০ শতাংশ ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়ও এক্সপোর্ট অরিয়েনটেড রেভিনিউর জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক দিচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের প্রচুর লাভ দেওয়ার চেষ্টা করে। এর জন্য বাংলাদেশ পুঁজিবাজার অনেকগুলো ভালো নিয়ম করেছে। যার ফলাফল পুঁজিবাজারে ইতোমধ্যেই দেখা গেছে। হংকংয়ের ফ্রন্টিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশ এশিয়ার সেরা পুঁজিবাজারে উঠে এসেছে।
এছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স ডাবল ডিজিট গ্রোথ ২৪.৪ শতাংশ। চলতি মাসে ডিএসইর মোট বাজার মূলধন রেকর্ড ৬৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারে উন্নয়নে সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
অপরদিকে বাংলাদেশের ই-কমার্স ২০২৩ সালে ৩ বিলিয়ন ডলারে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর পরিমাণ বর্তমানে রয়েছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের অবস্থান ৪৬তম। দুই হাজার সাইট এবং ৫০ হাজার ফেসবুক পেইজ রয়েছে এগুলোর।
১০ দিনের এই রোড শো পর্যায়ক্রমে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ আরও তিন শহর ওয়াশিংটন ডিসি, লসএঞ্জেলস এবং সানফ্র্যান্সিকোতেও অনুষ্ঠিত হবে।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থমন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস প্রেসিডেন্ট লরেন্স হেনরি সামার্স, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবিএম রুহুল আজাদ এবং বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান। প্রোগ্রামে স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক, নগদ এবং ওয়ালটন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কামরুল আনাম খান।