বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন —এফবিসিসিআই
প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে যাতায়াত ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ ৮৭ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ ও জ্বলানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। যেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে যাতায়াত ও যোগাযোগ খাতের কিছুটা কাটছাঁট করে হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে সংস্থাটির কার্যালয়ে গতকাল বাজেট প্রতিক্রিয়া ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। জ্বালানির দাম বাড়লে সব পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়া না গেলে উৎপাদন বিঘ্নিত হবে। ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। তাই আমরা মনে করি, অন্য খাতে বরাদ্দ কমিয়ে হলেও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। কৃষি খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। সামাজিক সুরক্ষায়ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম এক সময় খুব কম ছিল। আজ কিন্তু সেই অবস্থায় নেই। এখন বিদ্যুৎ-গ্যাসের অনেক দাম। বিদ্যুৎ-গ্যাসে আরো নানাভাবে ছাড় দেয়া যেতে পারে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ বিশাল রাজস্ব সংগ্রহ করা সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বিরাজমান কঠিন পরিস্থিতির কারণে অত্যন্ত চাপে। এমতাবস্থায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেট বাস্তবায়নে অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, রিজার্ভ বাড়ানো, অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ডলার সংকট এবং বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগ, আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ সবকিছুর গতি নিম্নমুখী। অথচ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী। সরকারকে এ বাজেট মেয়াদে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। সেখানে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক।’
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রসঙ্গে বলেন, ‘এনবিআরে সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানো দরকার। এনবিআরের ডিজিটালাইজেশন দরকার। আমরা বলেছিলাম, এনবিআরের পলিসি ও ইমপ্লিমেনটেশন উইংকে আলাদা করার কথা, এখনো সেই উদ্যোগ দেখছি না। করের জাল বাড়াতে হবে। উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাট অফিস বিস্তৃত করা দরকার। প্রয়োজনে কর শুমারি হওয়া উচিত। বাসা-বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া দরকার কারা কর দিতে পারবে।’
তিনি জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ ও উৎপাদন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে কৃষিতে ব্যবহার্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ড্রায়ার, সব ধরনের স্ক্রেয়ার মেশিন, পটেটো প্লান্টার, আমদানীকৃত সব ধরনের কনটেইনার, সমুদ্রের লবণাক্ত পানি থেকে সুপেয় পানি উৎপাদনের লক্ষ্যে আমদানীকৃত সোলার পাওয়ার অপারেটেড ওয়াটার ডিসট্রিলেশন প্লান্ট আমদানিতে আগাম কর অব্যাহতি দেয়ায় সাধুবাদ জানায় এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে এ খাতসহ উৎপাদনশীল সব খাতে আগাম কর অব্যাহতি প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর (এটি) ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং অগ্রিম কর (এটি) বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। অগ্রিম আয়কর যথাযথ সমন্বয় রিফান্ড না হওয়ায় পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পায়।’
সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইটি ও সফটওয়্যার খাতের গুরুত্ব অপরিসীম মন্তব্য করে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এ খাতে মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনিয়োগ আয়করমুক্ত এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূর্ণ পরোক্ষ করমুক্ত করা অত্যাবশ্যক।’ এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘চেষ্টা করা হয়েছে ভালো বাজেট দেয়ার জন্য। সব সরকারই চেষ্টা করে ভালো বাজেট দিতে। এবারো সেই চেষ্টা লক্ষ করা গেছে।’