বেভারেজ শিল্পের বিকাশে করনীতিতে সংশোধন চায় এফবিসিসিআই
বেভারেজ বা কোমলপানীয় শিল্পের বিকাশ, এ খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করা এবং সরকারের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে করনীতিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা জরুরি বলে মনে করছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও সম্ভাবনাময় এ শিল্পে বিদ্যমান সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গতকাল এফবিসিসিআই ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
এ সময় বেভারেজ শিল্পের সম্ভাবনা, সমস্যা ও সমাধানের উপায় সুস্পষ্ট, তথ্যভিত্তিক ও লিখিত আকারে সরকারের কাছে তুলে ধরার পরামর্শ দেন তিনি। এফবিসিসিআই তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে জোরালোভাবে আলোচনা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন মাহবুবুল আলম।
এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘বেভারেজ শিল্পের প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, এ শিল্পের তাৎক্ষণিক সমস্যা হলো আকস্মিক করের চাপ। আমি মনে করি, শিল্প সম্প্রসারণ এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কোমলপানীয় বা বেভারেজ খাতের কর হার সমন্বয় করা উচিত।’ বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এ খাতের স্টেকহোল্ডারদের উদ্যোগী হয়ে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল নির্ধারণ ও সরকারের কাছে সেটি বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরার পরামর্শ দেন এফবিসিসিআইয়ের এ নেতা।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘হঠাৎ করে পলিসি পরিবর্তন করে একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্পকে হুমকিতে ফেলে দেয়ার যৌক্তিকতা নেই। কর বাড়ানোর ফলে বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেবে। ফলে ভবিষ্যতে শিল্পটি ধসে পড়বে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বেভারেজ শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি করনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান এ শিল্পের প্রতিনিধিরা। বেভারেজ শিল্পের উৎসে কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ, বোতলজাত পানির (মিনারেল ওয়াটার) সম্পূরক শুল্ক শূন্য শতাংশ নির্ধারণ করাসহ বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন তারা।
আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার রেজাউল করিম বলেন, ‘পানির ওপর থেকে সম্পূরক কর প্রত্যাহার করতে হবে। এটি বিলাসপণ্য নয়। আমরা এখন মিনারেল ওয়াটার খেতে বাধ্য হচ্ছি। তাই জীবন রক্ষাকারী পণ্যে শুল্ক আরোপ করা ঠিক নয়।’
কোক বাংলাদেশের কমিউনিকেশন অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর আনোয়ারুল আমিন বলেন, ‘দেশে পানীয় পণ্যের ওপর ট্যাক্স কমানো হলে কোম্পানিগুলো রেডি-টু-ড্রিংক পণ্য বাজারে আনবে, যা অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হবে।’
তিনি বলেন, ‘কার্বোনেটেড পানীয়ের ওপর বর্তমান কর ৪৮ শতাংশের বেশি। প্রতিবেশী ভারতে যা ৪০ শতাংশ, শ্রীলংকায় ২৯ শতাংশ, নেপালে ৩৯ শতাংশ ও ভুটানে ৩০ শতাংশ।’
বিল্ডের সিইও ফেরদৌস আরা বেগম একটি প্রেজেন্টেশনে বলেন, ‘বাংলাদেশের বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রি ও রাজস্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মন্দার সম্মুখীন হয়েছে। নতুন আয়কর আইন ২০২৩-এর প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওঠানামার কারণে কাঁচামালের দাম বাড়ার মতো বিভিন্ন কারণের জন্য এ মন্দার মুখে পড়তে হয়েছে।’