South east bank ad

আপন জুয়েলার্সের ১৫ মণ সোনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে

 প্রকাশ: ০৫ জুন ২০১৭, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   জুয়েলারি

আপন জুয়েলার্সের ১৫ মণ সোনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে
আপন জুয়েলার্সের শো-রুমগুলো থেকে ১৫ মণের বেশি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, শুল্ক গোয়েন্দারা রোববার আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শো-রুম থেকে ১৫ দশমিক ১৩ মণ স্বর্ণালঙ্কার এবং আনুমানিক ১০ কোটি টাকা দামের ৭ হাজার ৩৬৯টি হীরার অলঙ্কার আনুষ্ঠানিকভাবে জব্দ করে। এরপর ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তার মাধ্যমে সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। পাশাপাশি আপন জুয়েলার্সের এসব শাখা থেকে ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৩১২ টাকা এবং ১০০ মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়েছে। আটক সোনা ও হীরার দাম প্রায় ২৭০ কোটি টাকা বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বৈধতার কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জুয়েলার্সের মৌচাক শাখা থেকে সোনা জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মীরা। ছবি: আব্দুল মান্নান এতে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দাদের পাঁচটি তদন্ত দল গত ১৪ ও ১৫ মে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শো-রুমে অভিযান চালিয়ে মোট ৪৯৭ কেজি (১৩ দশমিক ৫ মণ) স্বর্ণালঙ্কার ও ৪২৯ গ্রাম হীরা সাময়িকভাবে আটক করে। পরে সেগুলো শো-রুমগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধির কাছে জিম্মায় দেওয়া হয়। আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষ এসব সোনা-হীরার বৈধতার পক্ষে কাগপজপত্র দেখাতে না পারায় এবং তাদের ব্যাখ্যা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সেগুলো চোরাচালানের বলে প্রতীয়মান হয় বলে মইনুল খান জানান। তিনি বলেন, রোববার গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটের শো-রুমে আগে আটক স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে অতিরিক্ত ২১ দশমিক ৮৮৩ কেজি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। “এখানে তদন্ত টিম লকারের ভিতরে আরেকটি লকারের সন্ধান পেয়ে এই স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেন।” বৈধতার কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সোনা জব্দ করার ফলে প্রায় শূন্য আপন জুয়েলার্সের ছবিটি রাজধানীর মৌচাক মার্কেট শাখা থেকে রোববার তোলা। ছবি: আব্দুল মান্নান ওই শো-রুমসহ বাকিগুলো থেকে এদিন মোট ৭০ দশমিক ৫৪ কেজি স্বর্ণালঙ্কার বেশি উদ্ধার হয়। পরে এসব স্বর্ণ ও ডায়মন্ড অলঙ্কার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। “এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা হবে এবং পরবর্তীতে আইনানুগভাবে মামলা নিষ্পত্তি হলে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হতে পারে। একইসঙ্গে আপন জুয়েলার্সের মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে শুল্ক ও অন্যান্য অপরাধের কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে,” বলেন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এদিন স্বর্ণালঙ্কার জব্দ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‌্যাবসহ ঢাকা (উত্তর) ও ঢাকা (দক্ষিণ) ভ্যাট কমিশনারেট এবং ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) নেতারা শুল্ক গোয়েন্দাদের এই কার্যক্রমে সহায়তা করেন বলে জানান মইনুল খান। বনানীতে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক। এই পরিবারের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। বৈধতার কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জুয়েলার্সের মৌচাক শাখা থেকে সোনা জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মীরা। ছবি: আব্দুল মান্নান এরপর শুল্ক গোয়েন্দারা আপন জুয়েলার্সের ওই শো-রুমগুলোতে অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালঙ্কার আটক করে সেগুলো সিলগালা করে দেয়। এরপর এসব সোনা ও ডায়মন্ডের অলঙ্কারের মজুদের বিষয়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দফায় সুযোগ ও সময় দেওয়া হয় বলে শুল্ক কর্মকর্তা মইনুল খান জানান। আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ ও তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ দুই দফায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে গিয়ে শুনানিতে অংশ নেন। মইনুল খান বলেন, “সর্বশেষ গত ৩০মে উপস্থিত হয়ে তারা ১২৫ কেজি সোনার বিষয়ে বিমানবন্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন যাত্রীর আনা ‘ব্যাগেজ রিসিটের’ ফটোকপি জমা দেন। কিন্তু এসব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, এগুলো সব ফটোকপি এবং এসব যাত্রীর আপন জুয়েলার্সের কাছে বিক্রয়ের স্বপক্ষে কোনো ক্রয় রশিদ বা বিক্রয় রশিদ নেই। আটক অবস্থায় থাকা আপন জুয়েলার্সের সোনা জব্দ করে নিয়ে যেতে ধানমনণ্ডির সীমান্ত স্কয়ার শাখায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্মীরা। “ওই যাত্রীদের মধ্য থেকে ১৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা ছয় মাসে কোন কোন ক্ষেত্রে ১৮বারও বিদেশে ভ্রমণ করেছে এবং প্রতি ভ্রমণে দুটি করে স্বর্ণবার কিনেছেন। কিন্তু কী কারণে তারা বিদেশ ভ্রমন করেছেন বা এসব অতি ভ্রমণকারীরা অন্য কোনো চোরাচালানের সাথে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গের প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে এই শুল্ক কর্মকর্তা বলেন, এসব যাত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এতে আপন জুয়েলার্সের সম্পৃক্ততাও খতিয়ে দেখা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, আপন জুয়েলার্সের মালিকপক্ষকে ব্যবসা পরিচালনায় নিয়মিত ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স বিবরণীতে স্বর্ণ মজুদের হিসাব দাখিল করতে হয়। “সর্বশেষ তারা উক্ত বিভাগে স্বর্ণ মজুদের যে হিসেব দেখিয়েছেন তার সাথে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানে প্রাপ্ত স্বর্ণের কোনো মিল নেই। এক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকির পাশাপাশি ভ্যাট এবং আয়করেরও ব্যাপক ফাঁকি হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।”
BBS cable ad

জুয়েলারি এর আরও খবর: