শিরোনাম

South east bank ad

শিশু আইন প্রয়োগে সতর্ক হতে ১২০ আদালতের বিচারকের কাছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের চিঠি

 প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   আইন আদালত

শিশু আইনের কার্যকর প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিচারক, পুলিশ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তাদের আরও প্রশিক্ষণের চিন্তাভাবনা চলছে।
শিশু আদালতের বিচারকদের শিশু আইনের বিধানাবলী প্রতিপালনে আরো যত্নশীল হতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই আইন প্রয়োগে বিচারকদেরকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা প্রতিপালনে দেশের ১০২টি শিশু আদালতের বিচারকদের কাছে ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

আইনের সংঘাতে আসা শিশুর জামিন বিবেচনা না করে কারাগারে পাঠানো, রিমান্ড ও দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা সময়ে লঙ্ঘিত হচ্ছে শিশু আইন। অধস্তন আদালতের এসব আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন শিশুরা। এমতাবস্থায় মামলার নথি পর্যালোচনা করে শিশু আইন লঙ্ঘনের স্পষ্টত প্রমাণ পাচ্ছেন উচ্চ আদালতের বিচারকরা। সম্প্রতি বিস্ফোরক আইনের মামলায় এক শিশুকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের ঘটনায় যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাহমুদা খাতুনকে শোকজ করে হাইকোর্ট।

শিশু আইনে শিশুকে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান না থাকলেও এ ধরনের দণ্ড দেওয়ায় ঐ বিচারককে চার সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। বরিশালের বাকেরগঞ্জে ধর্ষণের মামলায় গত বছরের অক্টোবর মাসে চার শিশুকে জামিন না দিয়ে পাঠানো হয় যশোরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। এ ঘটনায় টিভি মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ৯ অক্টোবর রাতে বসে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রাতেই ঐ দ্বৈত বেঞ্চ শিশুদের জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিলে রাতেই শিশুরা সেখান থেকে মুক্তি পান।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মে গ্রেফতার হয় এক শিশু। এক বছরের বেশি সময় ধরে ছিল কারাগারে। কিন্তু কিশোরগঞ্জের শিশু আদালত তাকে জামিন দেয়নি। বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজিবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঐ শিশুকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, শিশু আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুকে কারাগারে রাখা যাবে না।

আইনানুযায়ী শিশুদের বিচারের যে নীতি রয়েছে তা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। ইতিপূর্বে হাইকোর্টের বিভিন্ন দ্বৈত বেঞ্চ থেকে রায় দিয়ে শিশু আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিশু আইন ঠিকভাবে অনুসরন করা হচ্ছে না। এ কারণে দেশের সকল শিশু আদালতের বিচারকদের আইনের সংঘাতে আসা শিশুদের বিচারের ক্ষেত্রে শিশু আইন প্রয়োগে অধিক যত্নশীল হতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান বলেন, দেশে ১০২টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। আইনানুযায়ী এসব ট্রাইব্যুনাল শিশু আদালতেরও দায়িত্ব পালন করে থাকেন। হাইকোর্টের এই নির্দেশনা বিচারকদের অবহিত করতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি জারির পাশাপাশি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

সম্প্রতি ‘আনিস মিয়া বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ এক রায়ে বলেছে, কোনো শিশুকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরিণতি সম্পর্কে শিশুদের সম্যক ধারণা নেই। অনেক ক্ষেত্রে তারা দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাওয়ার প্রলোভনে তারা জবানবন্দি দিতে রাজি হয়ে যায়। এ কারণে কোনো শিশুকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের জবানবন্দিকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। যদি এটা করা হয়, তাহলে নির্দোষ শিশুরাও জবানবন্দির ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন।

BBS cable ad

আইন আদালত এর আরও খবর: