গণমাধ্যমকর্মী আদালত’ হবে সব বিভাগে
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
গণমাধ্যম মালিক ও কর্মীদের সম্পর্ক এবং তাদের মধ্যকার বিরোধের জেরে মামলা-মোকদ্দমা হলে তা দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তির জন্য প্রত্যেক বিভাগীয় শহরেই ‘গণমাধ্যমকর্মী আদালত’ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হবে ‘গণমাধ্যমকর্মী আপিল আদালত’। গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন ২০২১-এ এমন বিধান রাখা হচ্ছে। তবে কোন ধরনের অপরাধের জন্য কী শাস্তি হবে, তা জানা যায়নি। আইনটি পাস হলে সাংবাদিকরা আর শ্রমিক শ্রেণিতে থাকবেন না। তারা গণমাধ্যমকর্মী হিসেবেই পরিচিত হবেন।
শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বর্তমানে সাংবাদিকরা শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু তাদের চাকরির ধরন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় এবং সময়ের পরিক্রমায় গণমাধ্যম জগতে বহুমাত্রিক পরিবর্তন আসায় সাংবাদিকদের শ্রম আইন থেকে বের করে গণমাধ্যমকর্মী আইন করার উদ্যোগ নেয় সরকার।
আইনটি ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং শেষে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মিললে আগামী শীতকালীন অধিবেশনেই আইনটি পাসের জন্য সংসদে তুলবে তথ্য মন্ত্রণালয়। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মালিকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের যত রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয়, সবই গণমাধ্যমকর্মী আদালতে নিষ্পত্তি হবে।
তবে মামলা আদালতে গড়ানোর আগে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির’ (এডিআর) সুযোগ রাখা হচ্ছে আইনে। এডিআরে মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে দুজন করে মোট চারজন বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে পারবেন। সাংবাদিকদের পক্ষের দুজনই অবশ্যই সাংবাদিক হবেন। তারা মীমাংসা করতে না পারলে বিভাগীয় শহরে ‘গণমাধ্যমকর্মী আদালতে’ মামলা করা যাাবে। এই আদালতে সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যেই মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। বিভাগীয় শহরের আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকায় গণমাধ্যমকর্মী আপিল আদালতে আপিল করা যাবে। তবে আপিল আদালতের রায়ের বিপক্ষে কোনো আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে- বিভাগীয় শহরের ‘গণমাধ্যমকর্মী আদালতের’ বিচারক হবেন জেলা জজ পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। আর ঢাকায় গণমাধ্যমকর্মী আপিল আদালতে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। হাইকোর্টের একজন বিচারক চেয়ারম্যান পদে বসবেন। এ ছাড়া আপিল আদালতে দুজন জেলা জজ থাকবেন সদস্য হিসেবে।
কর্মকর্তারা জানান, সাংবাদিকরা অনেক সময়ই অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হন। ঠিকমতো বেতনভাতা পান না। অনেক নারী সাংবাদিক মাতৃত্বকালীন ছুটি পর্যন্ত পান না। নতুন গণমাধ্যমকর্মী আইন পাস হলে মালিকরা সহজেই এমন অন্যায় আচরণ করতে পারবেন না। সাংবাদিকরা সহজেই মালিকপক্ষের নামে মামলা করতে পারবেন। আবার মালিকরাও অভিযুক্ত যে কোনো সাংবাদিকের নামে মামলা করতে পারবেন।
কর্মকর্তারা জানান, গণমাধ্যমকর্মী আইন পাস হলে সাংবাদিকরা আর ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ পাবেন না। কারণ ট্রেড ইউনিয়ন শুধু শ্রমিক শ্রেণির জন্য। সাংবাদিকরা এতদিন শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত হতেন। ফলে তারা ইউনিয়নও করতে পারতেন। গণমাধ্যমকর্মী আইন হলে তারা আর শ্রমিক থাকবেন না। তারা গণমাধ্যমকর্মী হিসেবেই পরিচিতি পাবেন। ফলে তারা ইউনিয়নের পরিবর্তে ভিন্ন নামে সমিতি ও অন্যান্য সংগঠন করার সুযোগ পারবেন।
এদিকে গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইনের খসড়া বিলে সরকারি অর্থ ব্যয়ের প্রশ্ন জড়িত থাকায় জাতীয় সংসদে উত্থাপনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সুপারিশের জন্য সার-সংক্ষেপ পাঠিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে- অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও সংবাদপত্রশিল্পের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য ‘দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িস (কন্ডিশনস অব সার্ভিস) ১৯৭৪’ প্রবর্তন করা হয়েছিল।
এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিক, সাধারণ কর্মচারী ও প্রেসকর্মীদের চাকরির শর্তাদি, আর্থিক বিষয়াদি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৪ সালের আইনটি রহিত করে সব প্রকারের শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য করে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ করা হয়, যাতে সাংবাদিক, সাধারণ কর্মচারী ও প্রেসকর্মীদের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরির ধরন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় এবং সময়ের পরিক্রমায় সংবাদপত্র জগতে বহুমাত্রিক পরিবর্তন হয়েছে। ফলে গণমাধ্যম মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সম্পর্ক এবং তাদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি, নিম্নতম বেতন হার নির্ধারণ, গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণ ও চাকরির শর্ত ও কর্মপরিবেশসহ গণমাধ্যমকর্মীদের আইনি সুরক্ষা প্রদানের জন্য এ আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এদিকে গত রবিবার প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইনের খসড়ায় ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। শীতকালীন অধিবেশনে আমরা সেটি সংসদে নিয়ে যেতে পারব বলে আশা করছি।’