জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেটে শ্রমিক পাঠাবে না বাংলাদেশ
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
বাংলাদেশের জোর আপত্তির পরেও জনশক্তি রপ্তানিতে ‘সিন্ডিকেশন’ চায় মালয়েশিয়া। গত শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) এক চিঠিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ২৫টি বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে লেখা এই চিঠিতে প্রকান্তরে সিন্ডিকেশনের পক্ষে মত দেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী। কিন্তু গত মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) এম সারাভানানকে লেখা চিঠিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি উম্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
চিঠিতে তিনি গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুদেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করেন। আজ বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে ইমরান আহমেদ বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাবে না বাংলাদেশ। জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে দুদেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতার পরিপন্থি। এর ফলে সিন্ডিকেশনের উদ্ভব হবে যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী গত ১৪ জানুয়ারি চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীকে লিখেছেন, দুদেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। এটি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভেতর একটি মাইলফলক। সমঝোতা স্মারক ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হয়েছে এবং সেই দিন থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিতের বিষয়টিও প্রত্যাহার করা হয়।
চিঠিতে এম সারাভানান আরো লিখেছেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বিষয়টি দ্রুত এবং স্বচ্ছ করা উভয়পক্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের আলোচনার সময় আপনি এ ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের প্রধান ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির (বিআরএ) মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মী সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় কাজ করবে। এছাড়া মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর চিঠির জবাবে গত মঙ্গলবার ফিরতি চিঠি পাঠান প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। চিঠিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি উম্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান তিনি। চিঠিতে জণশক্তি রপ্তানি দ্রুত শুরু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করায় এম সারাভানানকে ধন্যবাদ জানান ইমরান আহমেদ।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ সব সময় স্বচ্ছ ও নিরপাদ অভিবাসনের পক্ষে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চার্টার অনুযায়ী এবং বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ অনুযায়ী, বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য সুযোগ উম্মুক্ত রাখার পক্ষে যেটি দুদেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তিতেও উল্লেখ আছে।
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বারবার সতর্কতা সত্ত্বেও কিছু কর্মকর্তা ও কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে।
পরিষদের নেতারা বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের একটি স্বার্থান্বেষী দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী সমানভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বাংলাদেশে সিন্ডিকেশনের পক্ষে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা ন্যায্য সুষ্ঠ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্টদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বলছেন, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার ১ হাজারেরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নেপালের ৮৮৪টি রয়েছে। উভয় দেশের জন্য নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো অগ্রাধিকার তালিকা নেই। বাংলাদেশে অল্প কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার পীড়াপীড়ি রহস্যজনক, এটি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রভাবশালী অংশকে লাভবান করার জন্য হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ইঙ্গিত রয়েছে বলেও আশঙ্কা তাদের। যা অল্প সংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো অভিবাসন খরচ কম রাখার সরকারি প্রচেষ্টা ও উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার বৈধ জনশক্তি রপ্তানিকারক রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ২৫ জনকে ব্যবসার জন্য অনুমতি দেওয়া শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং অভিবাসন-সম্পর্কিত খরচ বাড়াবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, তারা মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং যেকোনো ধরনের সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হলে শ্রম বাজার আবারও হারিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি না হলে অভিবাসন ব্যয় বাড়বে।
বায়রার সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, বায়রার সব সদস্যদের কর্মী পাঠানোর সুযোগ থাকতে হবে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়ে কোনো সিন্ডিকেট গঠন করা উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।