শিরোনাম

South east bank ad

বন্দরে আটকে গেলো শুল্কমুক্ত ৪৪টি বিলাসবহুল গাড়ি

 প্রকাশ: ২৪ অগাস্ট ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   এনবিআর

বন্দরে আটকে গেলো শুল্কমুক্ত ৪৪টি বিলাসবহুল গাড়ি

শুল্ক বিভাগ সংসদ সদস্য কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ৪৪টি বিলাসবহুল গাড়ি আটকে দিয়েছে। যারা গাড়িগুলো আমদানি করেছিলেন তারা আর সংসদ সদস্য না থাকায় এগুলো আটকে দেওয়া হয়েছে। এই গাড়িগুলোর বেশিরভাগই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো।

    চলতি মাসের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এ বিধানের আওতায় আনা সাতটি গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হলেও এখনো বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে নিবন্ধন করা হয়নি। এসব গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর ও কমলাপুর আইসিডি দিয়ে আমদানি হয়েছে।

আমদানিকারকের পক্ষে এসব গাড়ি খালাসের দায়িত্বে ছিলেন সিএন্ডএফ এজেন্ট নাভানা লিমিটেড, গোল্ডেন স্টার এজেন্সি এবং  ছেরি ইন্টারপ্রাইজসহ ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্ভারের তথ্য ও সংশ্লিষ্ট তিন কাস্টম স্টেশন কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

    খালাসের অপেক্ষায় থাকা এসব গাড়ির আমদানিকারকরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই এসব গাড়ি খালাস করতে হবে।

আগস্ট মাসের ১ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে এমপি সুবিধায় খালাস নেয়া ৭টি গাড়ির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নে‌য়া হবে বলে জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, এই ৫১টি গাড়ির (যার বেশিরভাগই টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ও ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো) আমদানি মূল্য প্রায় ৬১ কোটি টাকা।

    সবচেয়ে কম দামের ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করা হয়েছিল ৯৮ লাখ টাকার সামান্য কিছু কমে। শুল্ক দিতে গেলে গাড়িটির দাম পড়বে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা ৩৩৪৬সিসির এ গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

আমদানি করা এসব গাড়ির বেশিরভাগই জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা জিপ, টয়োটা এল.সি স্টেশন ওয়াগটের এসব গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩০০০-৪০০০ সিসি।

    সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেন। এ ধরনের গাড়ির ওপর কর ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, তবে এমপিদের তা দিতে হয় না।

ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার একদিন পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে দিলে সংসদ সদস্যরা সংসদে তাদের সদস্যপদ এবং করমুক্ত গাড়ির মতো সুযোগ-সুবিধা হারান।

এনবিআরের নথি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম, মংলা বন্দর ও কমলাপুর আইসিডি থেকে যে সাতটি গাড়ি ছাড়া হয়েছে, সেগুলো আমদানি করেছেন ক্রিকেটার ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের ফয়জুর রহমান, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের গোলাম ফারুক পিংকু, নাটোর-১ আসনের আবুল কালাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মুজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরি। আরেকজন সাবেক সংসদ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি।

    বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় থাকা ৪৪টি গাড়ির মধ্যে মাত্র তিনটি গাড়ির বিপরীতে বিল অফ এন্ট্রি দাখিল হয়েছে। দিনাজপুর-১ আসনের মুহাম্মদ জাকারিয়া, টাঙ্গাইল-৮ আসনের অনুপম শাহজাহান জয়, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা জামান ববির নামে এসব এন্ট্রি দাখিল করা হয়।

মন্তব্যের জন্য সাবেক সংসদ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

অপর ৪১টি গাড়ির বিপরীতে কোনো আমদানি নথি দাখিল না হওয়ায় তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

কাস্টমসের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৭ জুলাই সিঙ্গাপুরের টয়োটা স্টোশু এশিয়া প্যাসিফিক পিটিই লিমিটেড থেকে ১ দশমিক ২৭ কোটি টাকা মূল্যের টয়োটা এল সি স্টেশন ওয়াগন জিআর-এস মডেলের একটি গাড়ি আমদানি করেন সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। সাকিব আল হাসানের পক্ষে এ গাড়িটি খালাসের জন্য কাস্টমসে নথি দাখিল করে নাভানা লিমিটেড।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা ৩৩৪৬সিসির এ গাড়িটির স্বাভাবিক শুল্ককর হার ৮২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান গৌতম চন্দ্র পাল গণমাধ্যমকে বলেন, এমপি সুবিধায় আনা গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আমরা এনবিআরের ডকুমেন্ট যাচাই বাছাই করি। এনবিআর থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ছাড় পেলে আমাদের এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে কোনো বাধা নেই। তবে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় এখন এমপি সুবিধায় আনা ভিন্ন নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়ার সুযোগ আছে। সে বিষয়ে বিআরটিএ সতর্ক থাকবে এবং প্রয়োজনে এনবিআরের মতামত নেয়া হবে।

তিনি বলেন, এসব গাড়ির তালিকা পেলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। এ বিষয়ে এনবিআরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সম্প্রতি যেসব গাড়ি খালাস হয়েছে তা ৬ আগস্টের আগে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন ছিল। ফলে আইনানুগভাবে তা আটক করার সুযোগ ছিল না। তবে যেসব গাড়ি ৬ আগস্টের পরে আমদানি হয়েছে তা খালাসের সুযোগ নেই। এ ধরনের গাড়ি খালাস করতে হলে শুল্ককর পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করতে হবে।

তিনি বলেন, সংসদীয় আসনে এমপিদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সুবিধা দেওয়া হয়। বর্তমানে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় তা শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাসের সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী, স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই খালাসের অপেক্ষায় থাকা গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে হবে।

    সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নাভানা লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রিপন প্রকাশ দাস বলেন, সাবেক সংসদ সদস্যদের নামে কিছু গাড়ি আগেই খালাস দেওয়া হয়েছে। বন্দর থেকে এসব গাড়ি খালাসের জন্য সংসদের স্পিকারের অনুমোদনের চিঠির প্রয়োজন হয়। চিঠিটি এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।

আইন প্রণেতাদের খুশি করতে ১৯৮৭ সালে এইচ এম এরশাদের শাসনামলে শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা চালু করা হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। প্রস্তাবে শুল্ক আরোপের পেছনে যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছিল এমপিদের গাড়ি আমদানিতে কর মওকুফের কারণে গত ১৫ বছরে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৫১৪৭ কোটি টাকা।

BBS cable ad

এনবিআর এর আরও খবর: