ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব

ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনের সভাপতি আবদুল হক এ প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সময় বারভিডার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি), বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ভ্যাট প্রফেশনালস ফোরাম, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা), বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএএ), বাংলাদেশ সিরামিকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন (রিহ্যাব), লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি)।
আলোচনা সভায় বারভিডা বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করে, যার মধ্যে রয়েছে ১০-১৫ আসনবিশিষ্ট হাইয়েস প্রকৃতির মাইক্রোবাসের ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, অবচয় হার পুনর্নির্ধারণ, হাইব্রিড গাড়ির সিসি স্লাব ও সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস, ফসিল ফুয়েলচালিত গাড়ির সিসি স্লাব ও সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস।
এদিকে অভিজাত ক্লাবের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে অগ্রিম আয়কর নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)। আয়কর আইনে এ বিধানটি নেই উল্লেখ করে আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ অথবা সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীন নিবন্ধিত ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের কোনো পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার আগে ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করার বিধান যুক্ত করা যেতে পারে। এতে আয়কর নথি নেই এমন করদাতাদের আয়করের আওতায় আনা সম্ভব হবে, ফলে কর আদায় বৃদ্ধি পাবে। যাদের আয়কর নথি আছে, তারা পরিশোধিত অগ্রিম আয়করের ক্রেডিট নিতে পারবেন বিধায় বাড়তি করের চাপ পড়বে না।’
আইসিএমএবি ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের জন্য আলাদা কর দিবস করা, সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে আয়কর উচ্চহার যৌক্তিক করা, কৃষিজাত পণ্যের উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাবও দিয়েছে।
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সেবার ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নীতির বিষয়টি তুলে ধরে আইসিএমএবি কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেয়। এ সময় বলা হয়, পোশাক শিল্পে বা অন্যান্য পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কাঁচামাল হিসেবে আনা পণ্যের করভার শূন্য হলেও ফ্রিল্যান্স সেবার ক্ষেত্রে সে সুবিধা পাওয়া যায় না।
তবে এমন প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কর অব্যাহতির কথা বলবেন না। কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না। সৈয়দ মুজতবা বলেছেন বই কিনে দেউলিয়া হয় না। আমি বলব কর দিয়ে দেউলিয়া হয়েছে বলে শুনি নাই। কর তো আয়ের ওপর, ব্যয়ের ওপর না। তাহলে দিতে সমস্যা কোথায়। নতুন করে কর অব্যাহতি দেয়ার কথা বলবেন না। আমরা চাই, যতটুকু আছে তাও কমিয়ে আনা, ধীরে ধীরে কর অব্যাহতি তুলে দেয়া।’
রিহ্যাব নিবন্ধন খরচ হিসেবে গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশ, স্ট্যাম্প শুল্ক ১ শতাংশ, নিবন্ধন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ফি ১ শতাংশ ও সব ধরনের ভ্যাট ২ শতাংশ নির্ধারণসহ বেশকিছু দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ও জাপান গার্ডেন সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন।
শিপিং এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০২৪ চূড়ান্ত করাসহ বেশকিছু দাবি জানিয়েছে বিএসএএ। সংগঠনের পরিচালক এএইচএম কামাল বলেন, ‘বিগত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে নতুন শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স ইস্যু করা হচ্ছে না। এনবিআর প্রস্তাবিত শিপিং এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০২৪ এখনো অনুমোদন না পাওয়ায় এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এর ফলে শিপিং বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ও কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’ তিনি এনবিআরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিধিমালাটি চূড়ান্ত ও অনুমোদনের অনুরোধ জানান।
এছাড়া বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশন এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিসিএমইএ সভাপতি ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশীয় টাইলস পণ্যের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ও স্যানিটারির ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলে দাম কমবে ও ব্যবহার বাড়বে।’
বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আয়কর আদায়ে বড় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে আইসিএবি। তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশে ব্রাঞ্চ অফিস কিংবা লিয়াজোঁ স্থাপন করলেও আয়ের ওপর কর দিচ্ছে না বিদেশী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেবল উৎসে কর নিয়ে খুশি থাকছে এনবিআর। চুক্তির ফাঁক-ফোকরে আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ সময় আইসিএবি সভাপতি মারিয়া হাওলাদারও বক্তব্য দেন।
আলোচনায় এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নীতি ও আইসিটি) হোসেন আহমদ, সদস্য (আয়কর নীতি) একেএম বদিউল আলম, সদস্য (ভ্যাট নীতি) ড. মো. আব্দুর রউফ, সদস্য (কাস্টমস: রফতানি, বন্ড ও আইটি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।