ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি

পরোক্ষ কর তথা মূল্য সংযোজন করের (মূসক বা ভ্যাট) ওপর সরকারের নির্ভরতা প্রতিবারের মতো চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় এবার ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই মধ্যে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটকেও এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৩ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৫ কোটি ৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
কমিশনারেটগুলোর মধ্যে গত অর্থবছরে শুধু ঢাকা পূর্ব ও রংপুর কমিশনারেট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। তাই এ দুটি কমিশনারেটকে এবার বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা পূর্ব কমিশনারেটের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১১১ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজার টাকা। আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৮২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এবার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
রংপুর কমিশনারেটের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮৬৯ কোটি ১১ লাখ ৯ হাজার টাকা। আদায় হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এবার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা।
তবে কমিশনারেটগুলোকে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো মতামত নেয়া হয় না বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন কয়েকজন কমিশনার। তারা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়, তারপর গতানুগতিকভাবে সেটি কমিশনারেটগুলোকে ভাগ করে দেয়া হয়।
এনবিআরের সাবেক একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ববলেন, ‘কোনো দপ্তরে এক অর্থবছরে বেশি রাজস্ব আহরণ হলে পরবর্তী বছরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি লক্ষ্যমাত্রা দেয়া সমীচীন নয়। বিশেষ কারণে একবার বেশি রাজস্ব আহরণ হতে পারে, যা পরবর্তী অর্থবছরে নাও থাকতে পারে।’ ধারাবাহিকভাবে বছরের পর বছর স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এনবিআরের সাবেক এ সদস্য প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘যেখানে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪-৫ শতাংশ, সেখানে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি কীভাবে ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ অর্জিত হবে?’
তিনি আরো বলেন, ‘ভ্যাট খাতে যথাযথ সংস্কার হয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের নামে কারো কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা টেকসই সংস্কার চেয়েছিলাম, সেটা করতে না পারলে এ লক্ষ্যমাত্রা কখনো অর্জিত হবে না।’
একজন ভ্যাট কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মোট ভ্যাটের ৭০ শতাংশ আসে উৎসে ভ্যাট থেকে। এটা আদায় করা হয়, সরকারের উন্নয়ন ব্যয় খাত থেকে। তার মানে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় কমে গেলে আদায়ও কম হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০ শতাংশ ভ্যাট আদায় হয় প্রচেষ্টানির্ভর খাত বা পণ্যসেবা থেকে। দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা হলো এ খাতের উৎস। এখানকার ব্যবসায়ীদের ৪ দশমিক ৩ বা সহগ ঘোষণা দিতে হয়। সহগ হলো উৎপাদন ও বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য বা সংযোজন। অর্থাৎ উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত কত টাকার সংযোজন হলো, সেটার ওপর ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়। এখানেই লুকোচুরি হয়, ব্যবসায়ীরা সহগ ঘোষণার সময় সেই লুকোচুরিটা করে থাকেন।