মোঃ জহিরুল ইসলাম: সৃজনশীল ও উদ্যোগী এক ব্যাংকার
দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে নির্বাহী পর্যায়ে এমন অনেক কর্মকর্তা আছেন যাদের মধ্যে রয়েছে সৃজনশীলতা, দক্ষতা এবং সর্বোপরী রয়েছে কর্মোদ্দীপনা। তাদেরই একজন মোঃ জহিরুল ইসলাম। মোঃ জহিরুল ইসলাম সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে জেনারেল ম্যানেজার্স অফিস ফরিদপুরে জিএম হিসেবে যোগদান করেছেন। পদোন্নতির পূর্বে তিনি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড প্রিন্সিপাল অফিস সদরঘাট এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আইবিবির একজন ডিপ্লোমেড এসোসিয়েট। সুদীর্ঘ ৩৪ বছরের কর্মজীবনে তিনি ১৯ বছর বিভিন্ন-শাখা ব্যবস্থাপক, প্রিন্সিপাল অফিস প্রধানের দায়িত্ব সফলতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
বিআরসি ১৯৮৩ ব্যাচের এই কর্মকর্তা তার মেধাবী কর্মোদ্যোগের মাধ্যমে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করায় তার নেতৃত্বাধীন অধিকাংশ শাখা ইতোমধ্যে ব্যবসা সফল শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই ব্যাংকার বরাবরই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা রেখে আসছেন। একজন ব্যাংকারের যে সকল গুণাবলী তার পেশাজীবনকে উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় করে তার সব কিছুই এই উদ্যমী ব্যাংকারের মধ্যে বিদ্যমান। প্রখর ধীশক্তিসম্পন্ন এই ব্যাংকার ১ জানুয়ারী ১৯৬০ সালে কুমিল্লার হোমনা উপজেলাধীন রঘুনাথপুর গ্রামের এক শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম এবং মাতার নাম আসিয়া খাতুন।
জহুরুল ইসলাম এর পিতা স্বনামধন্য সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বহু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত ছিলেন এবং তিনি দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। মেধাবী জরুহুল ইসলাম হোমনার কাশিপুর হাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৭ সালে সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৮১ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পড়াশোনা শেষে তিনি ১৯৮৩ সালের আগষ্ট মাসে প্রবেশনারী অফিসার হিসেবে দেশের বৃহত্তর রাষ্ট্রায়াত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকে যোগদান করেন।
শুরু হয় এক সম্ভাবনাময় তরুণ ব্যাংকারের পেশাজীবন। শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি দু’বছর কুমিল্লা প্রিন্সিপাল অফিসে বিভিন্ন সেকশনে কাজ করেন। ১৯৮৫ সালে কুমিল্লা কর্পোরেট শাখার মাধ্যমে শুরু হয় মাঠ পর্যায়ের শাখা ব্যাংকিং কার্যক্রম। ১৯৮৯ সালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে পদোন্নতির পর ৮৩ ব্যাচের যে ক’জন কর্মকর্তা শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পান তিনি তাদের একজন। তিনি ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত হোমনা শাখা এবং ১৯৯৫ পর্যন্ত মুরাদনগর শাখায় ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালের ১ মার্চ প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পান এবং একই শাখায় ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি গৌরীপুর শাখা, দাউদকান্দি শাখা এবং কুমিল্লা কোর্ট বিল্ডিং শাখার মত গুরুত্বপূর্ণ শাখায় সফল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালের ৮ ডিসেম্বর সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট শাখার ম্যানেজার হিসেবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এই মেধাবী ও কৃতী ব্যাংকার ২০০৮ সালের ২১ জুলাই সহকারী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং প্রিন্সিপাল অফিস নারায়ণগঞ্জের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করেন। জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম ২০১২ সালে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে মাদারীপুর প্রিন্সিপাল অফিসের অঞ্চল প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে ব্যাংকের মাদারীপুর অঞ্চলের শাখাসমূহ ঈষ্পিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়। প্রায় ৩৪ বছরের চাকুরী জীবনে এই ব্যাংকার যেখানে যে দায়িত্ব পেয়েছেন সেখানেই নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ২০১৩ সালে সোনালী ব্যাংকের বৃহৎ প্রিন্সিপাল অফিস কুমিল্লার দায়িত্ব পালনকালে তার সুযোগ্য নেতৃত্বে চার বছরে কুমিল্লা অঞ্চল সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করে। এ প্রসঙ্গে মোঃ জহিরুল ইসলাম এর বক্তব্য হচ্ছে যে, কোনো পেশাজীবির নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করাও বড় এবাদত। তিনি তার সহকর্মীদের প্রতিনিয়তই কর্মের মাধ্যমে ধর্ম পালনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন বর্তমানে ব্যাংকিং ব্যবসায় গ্রাহক যেখানে ভাল সেবা পাবে গ্রাহক সেখানেই যাবে। তাই গ্রাহক সেবাই হতে হবে একজন ব্যাংকারের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, অনলাইনে ব্যাংকিং চালু হবার পর সোনালী ব্যাংকের সেবার মান শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান সদরঘাট প্রিন্সিপাল অফিসের আওতাধীন শাখার সংখ্যা ২৫টি। ঢাকা শহরের বাইরে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়েও প্রিন্সিপাল অফিসের আওতাধীন শাখা রয়েছে। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে শাখাগুলোর তত্ত্বাবধান করে থাকেন। তার দক্ষ নেতৃত্বে সদরঘাট প্রিন্সিপাল অফিসের প্রায় সব ব্যবসায়িক টার্গেট ইতোমধ্যে পুরণ হয়েছে। তিনি আরো জানান গত ডিসেম্বরের ডিপোজিটের তুলনায় এ বছরের ডিসেম্বরের ডিপোজিট দ্বিগুন অর্জিত হয়েছে। অর্থাৎ ২০০% অর্জিত হয়েছে এবং মুনাফা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৫০% অর্জিত হয়েছে। তার এই সাফল্য শাখা ব্যবস্থাপকসহ সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধ করণের বহিঃপ্রকাশ।
এই তারুণ্যে উদ্দীপ্ত স্বপ্নদর্শী ব্যাংকার বলেন ব্যাংকের বর্তমান সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলোকিত ব্যাংকার ব্যক্তিত্ব জনাব ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ মহোদয়কে বাংলাদেশে আধুনিক ব্যাংকিং সেক্টরের মহাথীর হিসেবে মূল্যায়ন করেন, যার নেতৃত্বে শুধু সোনালী ব্যাংকই নয় পুরো ব্যাংকিং সেক্টরে নতুনমাত্রা যুক্ত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহোদয় ২০১৭ সালকে সোনালী ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তার দিক নির্দেশনা অনুযায়ীই নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান প্রতি শাখায় খেলাপী ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসএই ঋণ বিতরণসহ বৈদেশিক রেমিটেন্স বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে সুফল লাভ হয়েছে। তার মতে নিয়মাচার মেনে এবং ব্যবসায়িক দিক যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে ঋণ দিলে সেই ঋণ কুঋণে পরিণত হয় না। তিনি বলেন, শাখা পর্যায়ে দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং ভাল আচরনের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পোস্টিং দেয়া উচিৎ। কারন, শাখাগুলোাই হচ্ছে ব্যাংকের প্রাণ।
জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম একজন দায়িত্বশীল ব্যাংকার ব্যক্তিত্ব। তিনি কলেজ গেট শাখা, ঢাকার শাখা প্রধান হিসেবে শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার ৩৮৮% অর্জনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে টার্গেট পূরণের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শ্রেষ্ঠ ম্যানেজারের পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে প্রশংসাপত্র, ক্রেস্ট, আর্থিক প্রণোদনা লাভ করেছেন। তিনি কর্মজীবনে নিজেকে অধিক দক্ষ করার অভিপ্রায়ে অসংখ্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন।
মোঃ জহিরুল ইসলাম ব্যক্তিজীবনে যথেষ্ট সৃজনশীল। তিনি বাসার ছাদে ফল ও ফুলের গাছ লাগিয়েও সাফল্য লাভ করেছেন। প্রগতিশীল মনের অধিকারী জহিরুল ইসলাম মনে করেন সোনালী ব্যাংক লিমিটেড দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক। এখানে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের বিশাল অংশ এ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। সরকারী বিভিন্ন উন্নয়ন কাজেরও বড় অংশীদার সোনালী ব্যাংক। তিনি বলেন সোনালী ব্যাংকের উন্নয়ন মানেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। দেশ ও জনকল্যাণেল স্বার্থে সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে হবে।