বেলা অবেলার কথা : মাসুদুর রহমান
সময়টা ২০০৭ এর মার্চ। মাত্র কয়েক মাস আগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছি। বছর তিনেক র্যাবে চাকুরীর পর পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়িত হই। কিন্তু তিন মাস যেতে না যেতেই ডিএমপিতে বদলী। ডিএমপিতে আমার প্রথম ঠিকানা এডিসি-গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ । যেহেতু তখন ডিবিতে অফিসের স্থানের সীমাবদ্ধতা ছিলো, তাই অফিসের স্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস। উদ্দেশ্য অফিসে বসার স্থান। আর এই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনই ক্রমে ক্রমে আমার মুখ্য দায়িত্বে পরিনত হলো। একযুগের বেশী সময় এখানেই পার করেছি আমি। পাঁচ জন কমিশনারের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছি। তবে আমার তৃতীয় কমিশনার বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমদই এই আধুনিক মিডিয়া সেন্টার তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন করেন। সাংবাদিকদের সুবিধার জন্য ব্রিফিং রুম, সার্বক্ষনিক ওয়াফাই, ডিএমপি নিউজ পোর্টাল ইত্যাদি সুবিধা তিনি চালু করেন। সত্যিকার অর্থে আমাদের পেশাদারী আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি ইউনিটের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে। আমিই এই বিভাগের প্রথম ডিসি এবং এ যাবৎ কালে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ডিসি মিডিয়ার দায়িত্ব পালন করেছি। অনেক পত্রিকা ও টেলিভিশনের যাত্রার শুরু দেখেছি। অনেক সাংবাদিক বন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছি। অনেক চড়াই-উৎরাই !কত কী যে ! ব্যক্ত-অব্যক্ত কথা, বলা-না-বলা অনেক স্মৃতি। অনেক অভিজ্ঞতা !
আমার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমি সাংবাদিক বন্ধু ও আমার সহকর্মীদের অকুন্ঠ সমর্থন পেয়েছি। পরামর্শ পেয়েছি। এজন্য তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। তারাই আমাকে পরিচিতি দিয়েছেন। আমার ভুলকে শুধরে নেবার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আমার ভুলকে উপলব্দি করতে শিখেছি।
মানুষ হিসেবে আমার অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো। অনেক সাংবাদিক বন্ধুকে হয়তো তাদের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সেবা দিতে পারিনি। যেক্ষেত্রে সরকারী চাকুরীর কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকে। তবে এটুকু বলতে চাই চেষ্টা করেছি।
আমার দায়িত্ব পালনের সফলতাটুকু আমার সকল মিডিয়া সেন্টারের সহকর্মী, আমার উর্ধ্বতন অফিসারদের। যারা ভালোবাসেন। স্নেহ করেন। সফলতা সকল সাংবাদিক বন্ধুদের যারা আমাকে নানাভাবে উপদেশ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তাদের বলতে চাই রবীন্দ্রনাথের কথা….
সেতারেতে বাঁধিলাম তার,
গাহিলাম আরবার-
মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
আমি তোমাদেরই লোক..
এখানে আমার জীবনের অনেক বছর অতিবাহিত করেছি। আমার সহকর্মীদের মধ্যে সবসময়ই যুগপৎভাবে পুলিশ ও সাংবাদিকদের অবস্থান। কারণ তাদের দেখেই/ফোনেই আমার দিন শুরু হতো। আমার বর্তমান অবস্থান, চিন্তা-চেতনার সাথে শুরুর দিকের চিন্তা-চেতনার পার্থক্য হয়েছে । অনেক পুলিশ সহকর্মী অবসরে গেছেন…অনেকে চিরতরে হারায়ে গেছেন। অনেক সাংবাদিক সহকর্মী চিরতরে হারায়ে গেছেন । তবে কখনও হঠাৎ মনেহয় তারা এখনও বেঁচে আছেন। মাঝে মাঝে খটকা লাগে। হয় জীবন এরকমের হয়। ওরকমের হয়। নানা রকমের হয়। আমি আমারটাতে বসবাস করছি। তবুও জীবন বহতা নদী। কোথাও হয়তো কিছু একটা পলিমাটির মতো থেকেই যায়। অবশ্যই ভালোবাসার সুঁতো। সকলে ভাল থাকবেন। আপনাদের সকলকে নিরন্তর ভালোবাসা……আবার সেই জীবনানন্দ দাশ..
কোথায় সে নিয়ে গেছে সঙ্গে করে সেই নদী, ক্ষেত, মাঠ, ঘাস,
সেই দিন, সেই রাত্রি, সেই সব ম্লান চুল, ভিজে সাদা হাত
সেইসব নোনা গাছ, করমচা, শামুক, গুগলি, কচি তালশাঁস
সেইসব ভিজে ধুলো, বেলকুঁড়ি ছাওয়া পথ- ধোঁয়া ওঠা ভাত,
কোথায় গিয়েছে সব ? – অসংখ্য কাকের শব্দে ভরিছে আকাশ
ভোর রাতে- নবান্নের ভোরে আজ বুকে যেন কিসের আঘাত !
ভুল হলে ক্ষমা করবেন। দোয়া করবেন সেই প্রত্যাশা করতেই পারি......
(মাসুদুর রহমান এর ফেসবুক পেজ থেকে)