South east bank ad

ব্যাংকিং সমস্যায় উৎপাদন বন্ধ রেখেছে প্রায় ৪০০ পোশাক কারখানা

 প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   গার্মেন্টস/টেক্সটাইল

ব্যাংকিং সমস্যায় উৎপাদন বন্ধ রেখেছে প্রায় ৪০০ পোশাক কারখানা

দেশের ৪০০টি পোশাক কারখানা ব্যাংকিং সমস্যার কারণে বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। গতকাল শিল্পসংশ্লিষ্ট পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি বিজিএমইএর এক মতবিনিময় সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় অংশগ্রহণ করা ৭০টিরও বেশি সদস্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুসরণ করে খেলাপি ঋণ নীতিমালার মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া সভায় দীর্ঘদিন ধরে রুগ্‌ণ হয়ে থাকা ৭৭টি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিজিএমইএ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে ব্যাংকিং সমস্যা নিয়ে সদস্যদের এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সভাপতিত্বে ৭০টিরও বেশি সদস্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সংগঠনের সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক ফয়সাল সামাদ এবং বিজিএমইএর এক্সিট পলিসি-সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম ও ওয়ান স্টপ সেলসংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

সভার মূল আলোচনার মধ্যে অন্যতম ছিল খেলাপি ঋণ নীতিমালা। এ প্রসঙ্গে সদস্যরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সার্কুলারের অধীনে খেলাপি ঋণ নীতিমালার মেয়াদ তিন বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব করেন। তারা জানান, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ সংক্ষিপ্ত সময়ে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এছাড়া ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট কমানোর বিষয়েও আলোচনা করা হয়।

ফোর্সড লোন ও মামলার বিষয়ে সভায় সদস্যরা জানান, নিয়মবহির্ভূত কারণে ফোর্সড লোনের শিকার হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান চেক ডিজঅনার ও অর্থঋণ মামলার মতো জটিলতার শিকার হচ্ছে, যা তাদের কার্যক্রমকে আরো বাধাগ্রস্ত করছে। তারা এ পরিস্থিতি নিরসনে বিজিএমইএ বোর্ডকে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান।

সহনশীল এক্সিট পলিসি নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। সংগঠনের সদস্যরা একটি সহনশীল এক্সিট নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, এটি ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দেবে।

নীতি সহায়তার বিষয়ে সভায় সদস্যরা মতামত দেন যে দেশের অর্থনৈতিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতি সহায়তা দিচ্ছে, তা যেন শুধু বড় রফতানিকারকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোও যেন এ সুবিধা পায়, সে ব্যাপারে জোরালোভাবে আহ্বান জানানো হয়।

সভায় পোশাক খাতে দীর্ঘদিন ধরে রুগ্‌ণ হয়ে থাকা ৭৭টি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানানো হয়।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এই ব্যাংকিং সমস্যাগুলো শুরু হয়েছে মূলত কভিডকাল থেকে। সেই সময়ে শুরু হয়ে কভিড-পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও রয়েছে। তারপর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা গেছে ২০২৪ সালে। ওই সময়ও কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে। সব মিলিয়েই সংখ্যাটি উল্লেখ করা হয়েছে।’

সভায় বলা হয়, প্রায় ৪০০টি পোশাক কারখানা ব্যাংকিং সমস্যার কারণে বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। নীতি সহায়তা পেলে এ কারখানাগুলো পুনরায় চালু হয়ে অতিরিক্ত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘সভায় উত্থাপিত সব বিষয় নিয়ে বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদ দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে।’ এ লক্ষ্যে তিনি ব্যাংকিং সমস্যাগ্রস্ত কারখানাগুলোকে তাদের সমস্যাগুলো লিখিত আকারে বিজিএমইএকে দ্রুত অবহিত করার জন্য আহ্বান জানান।

মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী আরো বলেন, ‘বর্তমানে দেশের মোট ১৯টি ব্যাংকে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। দেখা গেছে, আমাদের পণ্য রফতানির বিপরীতে প্রাপ্য অর্থের একটি নথি বাংলাদেশে আসছে, আর অর্থগুলো আমদানির বিপরীতে দেশের বাইরেই সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে। দেশের বাইরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো হিসাব ঋণাত্মক বিধায় এমনটা হচ্ছে। এ কারণে তারল্য সংকট আরো বেশি ঘনীভূত হয়েছে। আমাদের টাকা আমরা নিতে পারছি না। ব্যাংকের দুর্বলতা গ্রাহকের ওপরে চাপিয়ে দেয়ার কারণে সমস্যা আরো বেড়েছে। গ্রাহক ব্যাংক সহায়তা পাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ৪০০টি কারখানা পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়েছে।’

BBS cable ad

গার্মেন্টস/টেক্সটাইল এর আরও খবর: