শিরোনাম

South east bank ad

নিজে আক্রান্ত তবুও হোমকোয়ারেন্টাইনে থেকেই ডা.ফারিয়া দিয়ে চলেছেন চিকিৎসা সেবা!

 প্রকাশ: ১০ জুন ২০২০, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   সফলতার গল্প

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বি এস এম এম ইউ) অর্থোডন্টিক্স বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. ফারিয়া তাবাসসুম তন্বী মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনের জন্যও বন্ধ রাখেনি তার বিন‌্যমূল্য টেলিমিডিসিন চিকিৎসা সেবা। এবিষয় নিশ্চিত করছেন ডা. ফারিয়া নিজেই। এ বিষয় তিনি বলেন, আমি করোনায় পজিটিভ হওয়ার পর সম্পূর্ণ হোমকোয়ারেন্টাইনে আছি, একদিনের জন্যও টেলিমেডিসিন সেবা বন্ধ রাখি নাই। আমরা ৫০ জনের একটি টিমসহ এ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। জানা যায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী এবং অন্য রোগীদের চিকিৎসায় নিজ উদ্যোগে ‘ফিমেল ডেন্টাল সার্জন অব বাংলাদেশ’ এর বন্ধুদের নিয়ে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন ডা. ফারিয়া তাবাসসুম তন্বী। ডা. ফারিয়া ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ফিমেল ডেন্টাল সার্জনদের নিয়ে একটি ফেইসবুক গ্রুপ খুলেছিলেন। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে ৫০ জন ফিমেল ডেন্টাল সার্জন নিয়ে একটি ফ্রি মেডিক্যাল টিম গঠন করেন। পরবর্তীকালে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং করোনা ডেডিকেটেড চিকিৎসক তিনি এ টিমের সদস্যদের মোবাইল নম্বর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন যেন যে কেউ ফোন দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। এসম্পর্কে ডা. ফারিয়া বলেন, ‘শুরুটা হয়েছিল ফলস নেগেটিভ রিপোর্টের কারণে। করোনা ভাইরাস রিপোর্ট নেগেটিভ বলে আমাদের ফিমেল ডেন্টাল সার্জন শুভেচ্ছার বাবার (৬৫) নিশ্বাসে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তাকে ভর্তি করছিল না করোনা ডেডিকেটেড কোনো হাসপাতাল। তিনদিন বিভিন্ন হাসপাতালের ঘুরে ঘুরে তিনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ছিল বলে অন্য হাসপাতালও ভর্তি করছিল না। তখন কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। অনলাইনে অক্সিজেনের খোঁজ পেলাম। পালস অক্সিমিটার কিনলাম। বাসায় রেখেই ইমারজেন্সি চিকিৎসা শুরু করলাম। অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিলাম আমি আর ডা. শুভেচ্ছা। রাত জেগে ফোনেই চিকিৎসা দিতাম। আমাদের সঙ্গে অনকলে থাকতেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এভাবেই একজন-দু’জন করে বর্তমানে ৪০০ করোনা রোগী ছাড়িয়েছে, যাদের বেশিরভাগের বয়স পঞ্চাশের বেশি। বর্তমানে সব রোগীর অবস্থাই ভালো ও সুস্থ আছে । সেই সঙ্গে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে।’ রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিড-১৯ পজিটিভ বা নেগেটিভ রিপোর্ট যাই আসুক না কেন, লক্ষ্মণ থাকলেই চিকিৎসা শুরু করে দেই। পাশাপাশি আরও কিছু পরীক্ষা করাই, যা কোভিডের লক্ষণ গুলোকে সাপোর্ট করে। তখন দেরি না করে সব নিরাপদ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। এখানে হারানোর কিছু নাই। রিপোর্ট একবার নয়, অসংখ্যবার ভুল আসতে পারে। তাই চিকিৎসা শুরু করে আমরা পর্যাক্রমে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের পর্যবেক্ষণে রাখি।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা তরুণ তাদের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার বিনিময়ে আমরা তাদের প্লাজমা ডোনেট করতে উৎসাহ দিচ্ছি। আর যারা সচ্ছল তাদের বলেছি, কোনো অভাবী পরিবারের চিকিৎসার খরচ যেন সম্ভব হলে তারা বহন করেন। অভাবী পরিবারগুলোর নম্বর সচ্ছলদের দেওয়া হচ্ছে। তারা চাইলে তাদের মতো করে অভাবী রোগীদের সাহায্য করবেন। অনেকেই রাজি হয়েছেন সাহায্য করতে।’ ডা. ফারিয়া বলেন, ‘ফিমেল ডেন্টাল সার্জনদের আমাদের এ গ্রুপ টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করছি।আমার সঙ্গে সারা রাত জেগে ফিমেল ডেন্টাল সার্জনরা গত এক মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডা.শাম্মা, ডাক্তার পুণ্য, ডা.মিশি, ডা. শুভেচ্ছা, ডা.আনিকা, ডা.মাহবুবা, ডা.সাদিয়া, ডা.আয়শা, ডা.রিভা, ডা. নিশিতা, ডা. বীথি, ডা. বুশরা, ডা. টগর, ডা চিশতি, ডা. রয় ডা.আজমিরা, ডা. জিয়াউল, ডা.আফরোজা , ডা. আনিস, ডা.রুবেল, ডা.তাসমিয়া, ডা.মালিহা, ডা.কানিজ, ডা.সারাহ, ডা.ইন্দিরা, ডা. জান্নাতুল, ডা. প্রত্যাশা, ডা.সাজিদা, ডা.ফারজানা, ডা.তাসমিয়া, ডা .হুমায়রা,ডা. টি ফাতিমা, ডা. হিমা, ডা.রোকসানা, ডা.জান্নাত, ডা.আইরিন, ডা.অতুশি, ডা. ইসরাতত ,ডা. কান্তি, ডা.রিভা, ডা.সুস্মিতাসহ আরও অনেকে। আমরা দিনে ২-৩ ঘণ্টা ঘুমাই। আমরা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছি। ইতিমধ্যে আমি করোনায় আক্রান্ত, আবার কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাদের রিপোর্ট ফলস নেগেটিভ বা ফলস পজিটিভ আসছে, তারা কোনো চিকিৎসা না পেয়েই মারা যাবে, তা হবে না। ঘরে বসেই চিকিৎসা দেওয়া এবং নেওয়া সম্ভব। এটা করতে পারলে ক্রিটিক্যাল রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্র উম্মুক্ত হবে। কেউ তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মারা যাবে না।’
BBS cable ad

সফলতার গল্প এর আরও খবর: