সাফিয়ার শিকলবন্দী যন্ত্রণাময় জীবন
শেখ জাহান রনি, (হবিগঞ্জ):
বাঁশের খুঁটির শিকলটি নিত্যসঙ্গী সাফিয়ার। আপনজনের মায়া-মমতা মিথ্যে হয়ে গেছে ভাগ্যবিড়ম্বিত এই তরুণীর। যেন দুর্বিষহ এক যন্ত্রণাময় জীবন।
১৯ বছর বয়সে সাফিয়া হঠাৎই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে কখনো হাসে, আবার কখনো কাঁদে। আবার হঠাৎ কারও ওপর ভীষণ রেগে গিয়ে মারধর শুরু করে।
কখনো বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। আবার কখনো নিজের শরীর নিজেই খামচে রক্তাক্ত করে। এমন অস্বাভাবিক আচরণ থেকে রক্ষা পেতে পরিবারের লোকজন একবছর ধরে সাফিয়াকে এক পা শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন ঘরের বাঁশের খুঁটির সঙ্গে।
প্রতিবেশী কেউ সামনে গেলে পায়ের শিকল খুলে দেয়ার আকুতি জানিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে সাফিয়া।মানসিক ভারসাম্যহীন সাফিয়া আক্তার হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের বানেশ্বর গ্রামের আনছর আলীর মেয়ে।
জানা গেছে, বিয়ের একবছর পর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় সাফিয়া। জন্মের কদিন পর মারা যায় তার নাড়িছেঁড়া ধন।
এরপর পুত্রসুখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সাফিয়া। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি তার। সাফিয়ার মা খুদেজা খাতুন বানু বলেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য সব শেষ করে দিছি।
অভাবের সংসারে ৩ পুলা (ছেলে) আর দুই মাইয়ারে (মেয়ে) লইয়া কষ্টে আছি। আমার মেয়ে সাফিয়া এখন মানসিক প্রতিবন্ধী, মানুষরে মারধর করে। বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
মেয়ে মানুষ এমন অবস্থায় বাইরে যাইতে দেই না। তাই পায়ে একবছর ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখছি। সরকার যদি আমার সাফিয়ার চিকিৎসার জন্য একটু সাহায্য করতো।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান মানবজমিন কে জানান, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই পরিবারটিকে সহায়তা করি। সরকারিভাবে সাহায্যের কোন ব্যবস্থা থাকলে আমি অবশ্যই করে দিব।
মাধবপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ আশরাফ আলী তাপস জানান, আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।