ঝালকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান এখনও মক্তবেই চলছে
মোঃ রাজু খান, (ঝালকাঠি):
গতবছরের ২৪ আগস্ট বিষখালী নদীর আকস্মিক ভাঙনে বিলীন হয় ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম দেউরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার ও একটি মসজিদ।
এরপর থেকেই শিখন-শিক্ষা কার্যক্রম চলে পার্শ্ববর্তি একটি মক্তবে। নতুন করে বিদ্যালয় নির্মিত না হওয়ায় মক্তবে পাঠদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদের ঝুকিমুক্ত পাঠদানের ব্যবস্থা করতে নতুন করে বিদ্যালয় তৈরীর উদ্যোগ নেন।
সরকারী-বেসরকারী কোন সহযোগিতা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ। ইতিমধ্যে সেখানে টিনের ছাউনি ও টিন-কাঠের বেড়া দিয়ে ৪কক্ষ বিশিষ্ট ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরের মেঝো পাকাকরণের উদ্যোগের ফলে এখনও সম্পুর্ণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় মক্তবেই পাঠদান চলছে।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন খান জানান, বিদ্যালয় ভবনের একাংশ বিষখালী নদীগর্ভে আকস্মিক বিলীন হওয়ায় ওই ভবনটি আরো ঝুকিপুর্ণ হয়েছে। ওখানে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের কোনভাবেই পাঠদান করানো সম্ভব না। তাই পার্শ্ববর্তি একটি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা (মক্তব) কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নিরাপদ পাঠদানের ব্যবস্থা করি।
এরপর থেকে আরেকটি ঘর তৈরী করে সেখানে পাঠদানের ব্যবস্থা করার চেষ্টায় আছি। ব্যক্তিগত অর্থায়নে ৩লক্ষাধিক টাকা ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে। বর্তমানে ফ্লোরের (মেঝো) কাজ চলছে। তিনি আরো জানান, নতুন করে একটি বিদ্যালয় ভবন স্থাপনের জন্য নিজস্ব জমিও নির্বাচন করা হয়েছে।
সরকারী বরাদ্দ পেলে সেখানেই বিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, প্রায় ৩কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঝালকাঠির বিষখালী নদীর আকস্মিক ভাঙ্গনের সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণি কক্ষ ও একটি মসজিদটি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের নীচে চাপা পড়ে স্থানীয় আফসার মেমোরিয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র নেয়ামতুল্লাহ নিখোঁজ রয়েছে।
২০২১ সালের ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বরিশাল ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরিদল অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি। স্থানীয়রা জানায়, নির্মাণের সময় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিষখালির ভাঙনের মুখে ছিল ভবনটি। বেজমেন্টে মাটি সরে যাওয়ায় এটি এখন শুধু মাত্র পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
ভবনের বাকি অংশ যে কোন মুহুর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। এতে ঝড়-বন্যায় পোনাবালিয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের আশ্রয়ের কোন স্থান থাকবেনা। স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল মীর বলেন, আকস্মিক ভাঙনের ছবি তোলার সময় একটি ছেলে ভাঙনের তীব্রতায় নদীতে তলিয়ে যায়। তাকে পাওয়া যায় নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ এলাকার নদীর তীরের বাসিন্দাদের আশ্রয় নেওয়ার আর জায়গা রইলো না। আমরা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন জানান, ভাঙন ঠেকাতে ৬ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন খান সে দিনের বর্ণনা দিয়ে জানান, সকাল ১০টার দিকে সাইক্লোন শেল্টার-কাম বিদ্যালয় ভবনের পশ্চিম অংশের মাটি কিছুটা দেবে যায়। দ্রুত শিক্ষকরা কয়েকজন ছাত্র নিয়ে স্কুলের মালপত্র অন্য জায়গায় সরিয়ে নিই।
দুপুর সাড়ে ১২টায় হঠাৎ বিকট শব্দে ভবনের অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে নদীতে তলিয়ে যায়। এতে স্থানীয় কৃষক বারেক হাওলাদারের ছেলে নিয়ামত উল্লাহ নিখোজ হলে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।


